ঘরের পোকামাকড় দূর করে যেসব গাছ

বাড়িতে ছোট থেকে বড় নানান বয়সি মানুষ থাকেন। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্যটিকে হয়তো দেখা যায় ঘরের মেঝেতেই বসে খেলছে। আবার বাড়ির সবচেয়ে বড় যিনি থাকেন তিনি বারান্দায় চেয়ারে বসে বাইরের আবহাওয়া দেখতে বেশ পছন্দ করে থাকেন। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তাদের ঘরে থাকতে হয়। অনেক সময় ঘরে নানারকম পোকামাকড়ের উপদ্রব হয়। যা বাড়ির সদস্যদের জন্য ক্ষতিকর। এসব ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে বাড়ির সদস্যদের রক্ষা করতে ঘরে গাছ লাগাতে পারেন। কথায় আছে ‘গাছ মানুষের বন্ধু’। কিছু কিছু সময় গাছ তার প্রমাণও দিয়ে থাকে। ঘরে যেসব গাছ লাগালে পোকামাকড় দূর হবে চলুন জেনে নেই:

গাঁদা ফুলের গাছ
শীতকালে গাঁদা ফুলের গাছ দেখা যায় অনেক বাড়িতেই। শুধু সৌন্দর্যই নয় গাঁদা ফুল গাছের উপকারিতা আছে অনেক। এই গাছে কিছু উপাদান আছে যার কারণে অনেক ক্ষতিকর পোকামাকড় কাছ ঘেষতে পারে না। বাড়িতে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় দূর করতে অবশ্যই গাঁদা গাছ বসান।

বেসিল পাতা
খাবারের স্বাদ বাড়াতে বেসিল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন পোকামাকড় তাড়াতেও বেসিল পাতা রাখা যায়।

পুদিনা পাতা
মশা দূর করতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। পুদিনা পাতার ঘ্রাণে মশা অস্বস্তিবোধ করে। তাই পুদিনা পাতা রাখলে ঘরে মশার উপদ্রব কমানো যাবে।

তুলসি পাতা
তুলসি মূলত একটি ভেষজ গাছ। ‘তুলসি’ অর্থ যার তুলনা নেই। এটি সর্দি, কাশি সহ নানা অসুখের মহৌষধ। তবে বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে তুলসি বেশ ফলদায়ক। তুলসী গাছ ঘরে থাকলে তেলাপোকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।

বাঁশ পাম গাছ
বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড পরিশোধন করার সবচেয়ে কার্যকরী গাছ হচ্ছে বাঁশ পাম গাছ। এটি দেখতে ছোট নারিকেল গাছের মত।পর্যাপ্ত সূর্যের আলোতে বেড়ে ওঠা এই গাছ ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। বাঁশ পাম গাছ বাতাস থেকে বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষাক্ত দূষণ মুক্ত করে। আকর্ষণীয় এ বাঁশ ৮ দশমিক ৪ স্কোর নিয়ে নাসার বাতাস বিশুদ্ধ করা উদ্ভিদের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে।আসবাবপত্রের পাশে ছায়া যুক্ত জায়গায় রেখে দিন। আসবাবপত্র থেকে নির্গত দূষণ শুষে নিবে। খুব বেশি পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে। এছাড়াও পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

এরিকা পাম
এরিকা পাম বাতাসকে শুদ্ধ করার ব্যাপারে এই ইন্ডোর প্ল্যান্টটির কথা যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এটিকে প্রকৃতি যেন বিশেষভাবে তৈরিই করেছে বাতাস পরিশুদ্ধ করার জন্য। এটি বসার ঘরে রাখার পক্ষে একেবারে আদর্শ একটি গাছ। অল্প আলো এবং মাঝে মধ্যে পানি দেওয়া ছাড়া বিশেষ যত্নের দরকার পড়ে না।

স্নেক প্লান্ট
নাসার গবেষণায় এই ‘স্নেক প্লান্ট’ বাতাস পরিষ্কার করার জন্য অন্যতম সেরা একটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন দূর করে থাকে। জনপ্রিয় এই গাছটি অল্প খরচেই ঘরের টবে লাগানো যায়।

স্পাইডার প্লান্ট
ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত রাখতে চাইলে স্পাইডার প্লান্ট হতে পারে সবচেয়ে ভালো একটি উপায়। টি কার্বন মনোক্সইড, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, চামড়ায় ও রাবার থেকে নির্গত দূষণ(Pollution) শোষণ করে। অনেকে ছাদে বা বারান্দায় এই গাছ রাখেন। কিন্তু তার মানে এই নয়, স্পাইডার প্লান্ট বাঁচাতে প্রচুর আলোর দরকার। পরিমিত পানি পেলেই বরং একটু কম আলোতেই এই গাছ বেশি ভাল ভাবে বাড়ে। তবে সপ্তাহে দুইদিন ২-৩ ঘণ্টার জন্য সূর্যের আলোতে রাখলে ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। বিবর্ণ বা বেশি লম্বা হয়ে যাওয়া পাতার আগা কেটে ফেলতে হবে। এ গোড়ার মাটি শুকিয়ে গেলে এরপর পানি দিন। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দুরে রাখুন।

পিস লিলি
চমৎকার একটি বায়ু পরিশোধক গাছ। অল্প আলোতেই এই গাছ বেড়ে ওঠে। এর হলুদ পাতা বুঝিয়ে দেবে সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রোদ পাচ্ছে। স্বাভাবিক পরিমাণে পানি দিলেই যথেষ্ট। ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে। এতে গ্রীষ্মে ফুটবে খুব চমৎকার সাদা ফুল। তবে বিড়াল, কুকুর আর বাচ্চাদের কাছে থেকে দুরে রাখুন এ গাছ। কারণ গলায় বা পেটে গেলে চুলকাবে।

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের কাছে একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ। অ্যালোভেরার বাংলা নাম ঘৃতকুমারী। তবে সারাবিশ্বের মানুষ একে অ্যালোভেরা হিসাবে চিনে। এটি একটি কাণ্ডবিহীন রসাল এবং শাসযুক্ত গাছ। এই গাছটি গড়ে ৬০-১০০ সেমি লম্বা হয়। পাতা ১০-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতার দুইপাশে কাঁটা থাকে এবং পাতা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা আকৃতির। এই গাছের ফুলও অনেক দর্শনীয়। অ্যালোভেরার আদি বাস উওর-আফ্রিকা এবং কেনারিদিপুঞ্জে। ক্যারলিনিয়াস সর্বপ্রথম অ্যালোভেরার নামকরন করেন। রূপচর্চা শুরু করে অ্যালোভেরা ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধও। বহু বছর ধরে মানুষ অ্যালোভেরাকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতেও অ্যালোভেরা কাজ করে। এটি বাতাসে থাকা বেনজিন ও ফরমালডিহাইড দূর করতে খুব কার্যকরী। পাশাপাশি যখন বাতাসে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যালের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যায়, তখন এর পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ পড়ে। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার ঘরে থাকা বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বুঝে নিতে পারবেন। অ্যালোভেরা পর্যাপ্ত সূর্যের আলোয় সবচেয়ে ভালোমতো বেড়ে ওঠে।

রাবার প্ল্যান্ট
ফিকাস ইলাস্টিক (সবচেয়ে বেশি রাবার প্ল্যান্ট, রাবার ট্রি বা রাবার ট্রি গাছ হিসাবে পরিচিত) এটি একটি জনপ্রিয় হাউজপ্ল্যান্ট কারণ এর মোমের প্রলেপযুক্ত পাতার জন্যে। গৃহপালিত হাউজপ্ল্যান্ট হিসাবে রাবার গাছ ছয় থেকে দশ ফুট লম্বা পর্যন্ত যে কোনও জায়গায় বৃদ্ধি পায়। রাবার প্ল্যান্ট তাদের অপ্রতিরোধ্য উচ্চতা এবং সুন্দর পাতার জন্য পরিচিত।

গোল্ডেন পথোস বা মানিপ্লান্ট
মানিপ্ল্যান্টকে সৌভাগ্যের গাছও বলা হয়। ধারণা করা হয়, এই গাছ বাড়িতে বা অফিসে লাগালে, বাড়ির সুখ- শান্তি আর ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হিসেবে কথিত আছে- গাছের প্রত্যেকটি শাখায় ৫টি করে পাতা থাকে। এই পাঁচটি পাতা ধাতু, কাঠ, জল, আগুন ও পৃথিবীর প্রতীক। এই পাঁচটি উপাদান সমৃদ্ধিকে আকর্ষণ করে। যে কোনো পরিবেশে বেঁচে থাকার অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে। আলো ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে, তেমন কোনো যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। আপনার ঘরের যেকোনো কোনায় এই লতানো গাছটি দূষণ শোষণ করে বাতাসকে বাসযোগ্য করে রাখবে। এটি বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে।

উইপিং ফিগ
এটি ওয়েপিং ফিগার বা ফিকাস ট্রি নামেও পরিচিত। নাসার স্টাডি অনুসারে, এই বাড়ির প্ল্যান্ট ইনডোর-এয়ার টক্সিন ফর্মালডিহাইড এবং জাইলিন অপসারণে দক্ষতার সাথে সক্ষম।

অর্কিড
অর্কিড হচ্ছে সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি পরিবারের নাম। এরা রঙিন, সুগন্ধি আর বহুলবিস্তৃত হয়। অ্যাাস্টারাসি পরিবারসহ, দুটি বৃহৎ পরিবারে বর্তমানে ৮৮০টি গণে ২১,৯৫০ থেকে ২৬,০৪৯টি গৃহীত প্রজাতি আছে। সিংহভাগ অর্কিডই পরাশ্রয়ী, তবে ভূমিজ অর্কিডও আছে, আছে মৃতজীবীও। অর্কিড এর সৌন্দর্যের তুলনা নেই। বিছানার পাশে অর্কিড রাখলে ঘরের সৌন্দর্যই পালটে যায়। এই গাছ অ্যালোভেরা, স্নেক প্ল্যান্ট ও অশ্বত্থ গাছের মতো অক্সিজেনও ত্যাগ করে। ফলে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে অর্কিড।

চাইনিজ এভারগ্রিন
ইন্ডোর গাছ হিসাবে চাইনিজ এভারগ্রিন গাছ খুবই পরিচিত । নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এটির উৎপত্তি চীনে। সে দেশে এটি খুব জনপ্রিয়ও। বাড়িতে রাখতে পারেন এই গাছ। একদিকে যেমন বিষাক্ত উপাদান সরে যেয়ে বাতাস বিশুদ্ধ থাকবে যেমনি সৌন্দর্যও বর্ধন হবে। বাতাসকে দূষণ মুক্ত করে, বাতাসকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ মুক্ত করে। কিন্তু একে লালন পালনের জন্য খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। ছায়াতে ভাল থাকে এরা। তবে খেয়াল রাখতে হয় যেন টবের মাটি ভিজে থাকে।