বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
বড়াইগ্রামে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গোপনে পছন্দমত লোকজন নিয়ে পকেট কমিটি গঠন, নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়মিত উপস্থিতি, শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার ও অশ্লীল বাক্য ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কচুগাড়ী ফকিরবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমএম জামানের এসব অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে গ্রামের লোকজন জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে কচুগাড়ী গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজনু মোঃ ইসহাক ৩ বিঘা জমি দান করে গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় কচুগাড়ী ফকিরবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপির আন্তরিকতায় বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ বেতন চালু হয়। এরপর থেকে তিনি কৌশলে প্রতিবার এমন ভাবে নিজের আত্মীয়স্বজন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে আসছেন যাতে কেউ তার কাছ থেকে হিসাব নিতে না পারে এবং তাকে কোন জবাবদিহিতা করতে না হয়। এবারও গত ১ লা ডিসেম্বর কাউকে না জানিয়ে গোপনে তিন বছর মেয়াদী ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন। নিয়মানুযায়ী ম্যানেজিং কমিটির গঠনের আগে বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডসহ বাজার-ঘাট ও দর্শনীয় স্থানে নির্বাচনী তফশীল টাঙিয়ে দেয়ার কথা। একই সঙ্গে সব শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝেও এ সংক্রান্ত নোটিশ পড়ে শোনানোর কথা। কিন্তু এসব কিছুই না করে প্রধান শিক্ষক গোপনে নির্বাচন কমিশনার উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করে নিজের পছন্দসই লোকজন নিয়ে একপি পকেট কমিটি গঠন করেছেন। এমনকি নিজের সুবিধার্থে কমিটিতে কচুগাড়ী গ্রামের সমালোচিত ব্যক্তি সাইদুর রহমান মন্টুকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। এভাবে গোপনে পকেট কমিটি গঠন করায় অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, ইতিপূর্বে শিক্ষক নিয়োগের নামে লাখ লাখ টাকা আদায় করে স্কুল ফা-ে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও তার লোকজন আতœসাৎ করেছেন। এসব কারণে ওই গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি নিজ গ্রাম ছেড়ে পাবনা জেলার চাটমোহরে বসবাস করেন। দূরবর্তী জায়গা থেকে তিনি নানা অজুহাতে প্রায়ই স্কুলে আসেন না। গত ২০১৫ সালে স্বজন প্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কম্পিউটার বিষয়ে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা নিয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক না থাকায় আজ পর্যন্ত সেই মেয়ের কোন বেতন ভাতা হয়নি। আবার তার কাছ থেকে উন্নয়ন ফান্ডের নামে নেয়া টাকাও ব্যাংকে জমা পড়েনি।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন ও অশালীন ভাষায় কথা বলেন। এসব কারণে এর আগেও তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ইউওএনও অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছিলো।
প্রধান শিক্ষক এমএম জামান এসব অভিযোগের বিষয়ে বলেন, কমিটি গঠনে কোন অনিয়ম হয়নি। তাছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়মিত উপস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে না পেরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ম্যানেজিং কমিটি গঠণে গোপনীয়তা রাখা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমি তফশীল অনুযায়ী নির্ধারিত যে কয়জনের মনোনয়নপত্র পেয়েছি তাদেরকে বিজয়ী করেছি।