যশোর রেজিস্ট্র অফিস: নকলনবিশ সাইফুলের দম্ভোক্তি, তদন্তে কিছুই হবে না

ইয়ানূর রহমান : যশোর রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ সাইফুলের জালিয়াতি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি আগামী সপ্তাহে তাদের রিপোর্ট জমা দেবেন। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব নারায়ন চন্দ্র মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত কমিটি বারবার বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। কমিটির একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, সাইফুলের অপরাধ শতভাগ শাস্তিযোগ্য। তার যেসব দুর্নীতি ও জালিয়াতি তদন্তে বেরিয়ে আসছে তা ধারনার বাইরে।

ভলিউম বইয়ে জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করার অভিযোগে গত ২৪ আগস্ট সাইফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাইফুল একই ধরনের অপরাধ আগেও দু’বার করে সাময়িক বরখাস্ত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নকলনবিশ সাইফুল ইসলাম শার্শা উপজেলার ১৯৯০ সালের ৫১০২ নম্বর দলিলের দাগ নম্বর পরিবর্তন করে। দলিলে এসএ দাগ ছিল ২২২৭ সেটি ঘষে করে ১৮০১। হাল দাগ ছিল ৩৬৭৩ সেটি করেছে ৪১৭৮। এই দলিলটি ৬৮ নম্বর ভলিউম বইতে ছিল। সাইফুল নকল তোলার জন্য রেকর্ড রুম থেকে ভলিউম বইটি
সংগ্রহ করেন। জমির বিক্রেতা ছিলেন খোদেজা খাতুন আর ক্রেতা আব্দুল হাই।
সাইফুল সাব রেজিস্ট্রার ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর নিজেই করে নকল তোলার জন্য জমা দেন। আইনত কোন নকলনবিশ আবেদন করতে পারেন না।

অনুসন্ধানে বের হয়েছে, নকলনবিশ সাইফুল ইসলাম ৫৮৬৮ নম্বর দলিলের পাতা ভলিউম থেকে ছিড়ে নিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে কেশবপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিল সম্পাদন হয়। জমির মালিক নকল তুলতে গিয়ে জানতে পারেন ভলিউমে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র নেই। যশোর সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ১৯৭৬
সালের দলিল নম্বর ১৬২৮৬।

ভলিউম নম্বর ২০৩। পাতা নম্বর ১১৫, ১১৬ ও ১১৭। এই জমির মালিক মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালি গ্রামের নুরুল হুদা মিয়ার ছেলে দুলু মিয়া। ভলিউম থেকে ১১৫, ১১৬ ও ১১৭ নম্বর পাতা গায়েব হয়ে গেছে। কেবল গায়েবই হয়নি, তার জায়গায় সেঁটে দেয়া হয়েছে ঢাকার একব্যক্তির জমির কাগজপত্র ।

১৯৮০ সালে রেজিস্ট্রি হয় ৫৮৫ নম্বর দলিল। যার ভলিউম নম্বর ৪। পাতা নম্বর ২২৭, ২২৮, ২২৯ ও ২৩০। এই ভলিউম থেকে উল্লিখিত চারটি পাতা ছিড়ে ফেলা হয়েছে। রেকর্ড রুম থেকে বলা হচ্ছে চার নম্বর ভলিউম বইটি দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভলিউমের পাতা ছেড়া এই চক্রের বিরুদ্ধে আগে একবার তদন্ত হয়েছে। সেখানে তাদের এই অপকর্ম প্রমাণিত হয়। কিন্তু তাতে কী! অর্থের জোরে পার পেয়ে গেছে। এই চক্রের হোতাদের একটিই বক্তব্য, ‘টাকা থাকলে সবকিছুই ম্যানেজ করা সম্ভব।’ বাস্তবে হচ্ছেও তাই।

এবারও সাইফুল চড়া গলায় বলে বেড়াচ্ছেন মিলন ও রবিউল ভাইকে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত ডিআরকে পাঁচ লাখ টাকায় ম্যানেজ করে ফেলেছি। এ বিষয়ে সাইফুল বলেন, যা পারেন লেখেন। তদন্তরিপোর্ট যাই হোক আমার কিছুু হবে না, আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ ও সাক্ষ দিয়েছে তারাই উল্টো ফাঁসবেন। সব ম্যানেজ হয়ে গেছে।