নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের সিংড়া পৌর শহর ও কলম ইউনিয়নের একাংশ মিলে মহেশচন্দ্রপুর গ্রাম । এ গ্রামের মাঠ জুড়ে করলার সমারোহ। কয়েক দশক ধরে করলার আবাদ ও বাম্পার ফলনের কারণে ‘করলার গ্রাম’ হিসেবে চারদিকে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামটির। কাক ডাকা ভোর থেকে ক্ষেতের করলা তোলার উৎসব শুরু হয়ে যায়। করলা তোলার পর কৃষকরা ডালি বোঝাই করে কেউবা কাঁধে,কেউবা মাথায় আবার কেউবা অটোভ্যান যোগে স্থানীয় মহেশচন্দ্রপুর বাজারে (পৌরসভার সীমানা শেষে) এসে হাজির হন। আর এখানেই সপ্তাহে ৭দিনই বসে করলার বিশাল হাট। বিভিন্ন জায়গার পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখানে এসে করলা পাইকারী কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মণ করলা এখান থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় মাঝে মধ্যেই বিপাকে পড়তে হ”েছ কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী এ গ্রামের কৃষকরা করলার আবাদের পাশাপাশি একই জমির মধ্যে পটল,কুমড়া, ঢেড়শ, বরবটি,বেগুন, মরিচ, লাউ আবাদ করে আসছে। করলার পাশাপাশি এগুলো আবাদ অত্যন্ত লাভজনক বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছর সিংড়া উপজেলায় একশত ৯০ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে মহেশচন্দ্রপুর গ্রামেই এক’শ হেক্টরের বেশি জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। এ বছর উৎপাদিত করলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭০মেট্রিক টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (২৫ ডিসেম্বর) রবিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহেশচন্দ্রপুর বাজারে কৃষকরা অটোভ্যানের উপর করলার ডালি নিয়ে পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে দর দাম ঠিক করছে। এসময় মহেশচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জনাব আলী মৃধা জানান, এ গ্রামের প্রায় শতভাগ মানুষ সবজি চাষ করেন। এরমধ্যে করলার আবাদ করেন শতকরা ৯০জন।
তিনি আরও জানান, বীজ কেনা,পরিচর্যা ও কীটনাশকসহ এক বিঘা জমিতে করলা আবাদ করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখানে বেশির ভাগ সাইট্যা জাতের করলার আবাদ হয়। এই জাতের বীজ রংপুর থেকে আনা হয়। এক সপ্তাহ পর পর জমিতে ছত্রাকনাশক দিতে হয়। ভালো মানের করলা হলে এবং ন্যায্য মূল্য পাওয়া গেলে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার করলা বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু এখানে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে করলা বিক্রি করতে হয় বলে মাঝে মধ্যেই আমাদের বিপাকে পড়তে হ”েছ।
গ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ী মইদুল মন্ডল জানান, সে একজন স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ী। তাছাড়া বংশ পরম্পরায় তিনি করলার আবাদ করেন। এ গ্রামের মাঠে প্রতিবছর ভালো মানের করলার আবাদ করা হয়। এখানকার কৃষকদের বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে একমাত্র স্থানীয় মহেশচন্দ্রপুর বাজার। সকাল ৬টা থেকে শুরু করে ১১টা এখানেই চলে বেচা-কেনা। প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথমে জমি থেকে করলা কম উত্তোলন হয়। তবে মাসের শেষে ও মার্চ মাসের শুরুতে পুরোদমে চলে করলা উত্তোলন। এসময় আমদানী অনেক বেশি হয়।
স্থানীয় কৃষক শামছুল আলী ও আঃ সোবহান জানান, প্রতি এক সপ্তাহ পরপর এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ২০মন করলা উত্তোলন করা যায়। করলার আমদানী বেশি হওয়ার কারনে দাম তুলনামূলকভাবে কম। তবে মৌসুমের শুরুতে করলা প্রতি কেজি ৬৫-৮০টাকা দরে বিক্রি করায় আবাদের খরচ উঠে গেছে। এখন যা বিক্রি করা হবে তাই লাভ। উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া পরামর্শে একই জমিতে করলার পাশাপাশি আমরা পটল,কুমড়া, ঢেড়শ, বরবটি,বেগুন, মরিচ, লাউ আবাদ করছি। তাছাড়া আমরা বিষমুক্ত করলা উৎপাদন শুরু করেছি। বগুড়া থেকে আগত মহাস্থান গড়ের পাইকারী ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম ও নাটোর থেকে আগত বড়াইগ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ী আলম হোসেন জানান, এখানে করলার আমদানী ভালো। তাছাড়া ভালো মানের করলা পাওয়া যায়। আমরা এখান থেকে করলা কিনে মিনি ট্রাক/বড় ট্রাক যোগে রংপুর,দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, আহমেদপুর,দয়ারামপুর,রাজধানীর কারওয়ান বাজার,সাভার, চৌরাস্তার বাজার গুলোর অন্য পাইকারদের কাছে গিয়ে বিক্রি করি। এতে করে কেজি প্রতি ৪টাকা বাড়তি খরচ হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর উপজেলায় তুলনামূলক বেশি করলার চাষ হয়েছে। বিগত বছরের মত এবারও উৎপাদিত করলার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষমুক্ত করলা উৎপাদনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হ”েছ। এ পদ্ধতিতে করলা আবাদে কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করলে খরচ অনেকটা কম হবে। নিরাপদ সবজি আবাদে কৃষি বিভাগ নিরলস ভাবে কাজ করছে।