নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ওয়ারি এলাকা থেকে পৃথক পৃথক অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা জব্দসহ ০৬ জন কুখ্যাত মাদক ব্যবাসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। বর্তমান সময়ে কতিপয় মাদক ব্যবসায়ীগণ ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেন্সিডিল, হেরোইন, দেশী মদ, বিদেশী মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য অভিনব কায়দায় বহন করে নিয়ে আসছে। এ ধরনের মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট। ইতোপূর্বে র্যাব-৩ বিগত দিনগুলোতে গাঁজা পাচারকারীচক্রের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭২টি অভিযান পরিচালনা করে ৩,৯০৩ কেজি গাঁজা উদ্ধারসহ ২৮৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ ভূয়া সাংবাদিক পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের ০৪ জন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীকে ৫০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ওয়ারি এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করে একাধিক ব্যাগ ভর্তি ১৫০ কেজি গাঁজা ও ০১ টি ট্রাকসহ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ সুরুজ (২০), পিতা-মোঃ সুকুদ্দি, সাং-খহরমোর ধুলাউরি, থানা-গমস্তাপুর, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং সহযোগী ২। শিমুল (২৪), পিতা-আঃ রহিম, সাং-পুনুমতি, থানা-বুরিচং, জেলা-কুমিল্লা, ৩। মোঃ শাহিন (২৪), পিতা-আমির আলি, সাং-উজিরপুর, থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ৪। মোঃ মিলন (২৮), পিতা-মোঃ রেনয়ালি, সাং-সাতরসিয়া, থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ৫। মোঃ রয়েল (২৭), পিতা-মোঃ আমজাদ আলী, সাং-নদাদ্বীপ পাড়া, থানা-গমস্তাপুর, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ৬। মোঃ আশরাফুল ইসলাম (২৮), পিতা-দুরুলহুদা, সাং-ইসলামপুরগঞ্জ, থানা-গমস্তাপুর, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উক্ত মাদক ব্যবসায়ী চক্রটি বিগত তিন বছর যাবৎ কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা এবং নারায়ণগঞ্জ হতে মাদকের সবচেয়ে বড় বড় চালান নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা হলো সুরুজ এবং তার প্রধান সহযোগী ট্রাক চালক রয়েল। দুজনের পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের আরো ০৪ জন সহযোগী বিভিন্ন সময় অবৈধ মাদকের চালান আনা-নেয়া ও বহনের কাজে সহায়তা করে থাকে। তারা অল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র গড়ে তোলে। উক্ত চক্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের অভিনব কায়দায় কখনও বিভিন্ন ভূয়া নাম পরিচয় ব্যবহার করে কুমিল্লাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা হতে ট্রাক ও যাত্রীবাহী গাড়ী যোগে অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজার চালান বহন করে নিয়ে এসে নিজ হেফাজতে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করত। তারা নিয়মিত বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য বহন করে বিশাল চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে আনা-নেয়া করে এবং পৌঁছে দিয়ে থাকে।
ধৃত আসামীদের মধ্যে মূলহোতা সুরুজ পেশায় মূলত পিকআপ গাড়ির চালক। সে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় পিকআপ চালাত। পরবর্তীতে ২০২০ সাল হতে ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কে ট্রাকের হেলপারি শুরু করে এবং উক্ত পেশার আড়ালে অর্থলিপ্সার কারনে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। উক্ত কাজের পাশাপাশি সে খুব সহজেই মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ চালাতে থাকে। নারায়ণগঞ্জসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে কৌশলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজা এনে তার পাঁচ সহযোগীসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করে। এভাবে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীতে মাদকের সবচেয়ে বড় চালানগুলো আনা নেয়া করার মাধ্যমে জমজমাটভাবে তাদের এ অনৈতিক মাদকদ্রব্যের ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
উক্ত চক্রের সহযোগী আশরাফুল এর পেশা মূলত সিএনজি চালক। সে সিএনজি চালানোর আড়ালে পূর্ব থেকেই মাদকের চালান বহন করত। একপর্যায়ে উক্ত চক্রের মূলহোতা সুরুজের সাথে তার পরিচয় হয়ে তার এই অপরাধ কার্যক্রম আরও বেগবান হয়। অধিক লাভের আশায় আশরাফুল এর শ্যালক মিলনকে উক্ত কাজের জন্য ডেকে নিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে সুরুজ মোটা টাকার বিনিময়ে তার সাথে কাজ করার লোভনীয় কথা বলে প্রলুব্ধ করে। এভাবে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সুরুজের পরিকল্পনা মোতাবেক মাদক এর ব্যবসা করে পুরো রাজধানী জুড়ে মাদক ছড়িয়ে দিয়ে আসছিল। তাদের মধ্যে মিলন মাদকের চালান নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় ২০২১ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। উক্ত মামলায় মিলন ৫৪ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তির পর সে একই পেশায় নিয়োজিত হয়।
এছাড়াও উক্ত চক্রের অপরাপর দুই সহযোগী শিমুল এর পেশা ভাঙ্গাড়ী ব্যবসা এবং শাহিন ভ্যান চালকের পাশাপাশি অবৈধ মাদক বহন করত। একপর্যায়ে এসব অবৈধ ব্যবসার খাতিরেই সুরুজ এবং রয়েলের সাথে তাদের পরিচয় হয়। অতপর তারা যোগসাজসে নিজ পেশার আড়ালে মূলহোতা সুরুজের পরিকল্পনা মোতাবেক চুক্তি ভিত্তিক বিভিন্ন জায়গা থেকে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রধান ভ‚মিকা পালন করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।