সঞ্জু রায়, বগুড়া: মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে বগুড়ায় প্রতি বছরের ন্যায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে অবসরপ্রাপ্ত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার সকালে পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে বগুড়ার নিবাসী কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন পুলিশ পরিবারের এমন ১৪০ জনকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম এর সভাপতিত্বে ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দেশকে স্বাধীন করতে এই বাহিনীর ঐক্যবদ্ধভাবে নেয়া পদক্ষেপ বিজয় অর্জনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হার না মানা লড়াইয়ে ৯ মাসের যুদ্ধে এই বাংলা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেখানে পুলিশ সদস্যদের যে ত্যাগ ও ইতিবাচক ভূমিকা ছিল তা বিজয় অর্জনকে ত্বরাণিত করেছে। তবে শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধেই নয়, দেশের প্রতিটি বিপর্যয়ে পুলিশ সদস্যরা সামনের সারি থেকে লড়াই করে যাচ্ছে। এজন্য বগুড়া জেলা পুলিশের প্রতি বছর নেয়া ব্যতিক্রমী এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন সত্যিই তাদের প্রাপ্য। অনুষ্ঠানে সাংসদ হাবিবর রহমান আরো বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও তাদের সুন্দর একটি জীবন পরিচালনার জন্যে সামগ্রিক সকল উদ্যোগ নিয়েছে একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিশ্চিত করেছেন যা সকলকে স্বীকার করতে হবে। এছাড়াও বগুড়াসহ দেশব্যাপী থাকা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের উপহারস্বরুপ যে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করে দেওয়া হয় তা শতভাগ নিশ্চিতকরণ এবং পুলিশ সদস্যদের অবসরোত্তর বা মৃত্যুর পরেও পরিবারের জন্যে রেশন সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে তিনি মহান সংসদে দাবি জানাবেন মর্মে অঙ্গিকার করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, অর্জন করেছি স্বাধীন লাল সবুজ পতাকা। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পর এসেও যখন দেখতে হয় স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সদস্যরা আমাদের জয় বাংলা স্লোগান কে নিয়ে কটাক্ষ করে এবং জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করে দেশবিরোধী চক্রান্তে মেতে উঠে তখন আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আমাদের লড়াই এখন এই অপশক্তির বিরুদ্ধে যা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে সাহস ও তাদের দেশপ্রেম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যেমন তারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তেমনি বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশেও দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় কাজ করতে এসপি সুদীপ সকলের আর্শীবাদ ও স্নেহাশীষ কামনা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি জহুরুল ইসলাম তালুকদার, বিশেষ পুলিশ সুপার (সিআইডি) মোহাম্মদ কাওসার শিকদার, হাইওয়ে পুলিশ সুপার (বগুড়া রিজিওন) হাবিবুর রহমান, ৪ এপিবিএন এর সহ-অধিনায়ক পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রুহুল আমিন বাবলু।
এদিকে প্রতি বছর বগুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে সকলে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অনুভূতি প্রকাশের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন দেশের জন্যে তাদের শ্রম ও ত্যাগ স্বার্থক কারণ স্বাধীন বাংলার মানুষ আজ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান বুঝতে পারে যা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রাকে ধাবিত করতে এবং তারুণ্যের শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে সর্বদা সম্মুখ সারিতে থেকে কাজ করার শুভ কামনা জানিয়ে তরুণদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন সংবর্ধনাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে দৃশ্য সকলের হৃদয়কে দিয়েছে এক অনাবিল প্রশান্তি কারণ তরুণরাই পারে এদেশের চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করতে।
অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আব্দুর রশিদ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্), মোতাহার হোসেন (ডিএসবি), সজীব শাহারীন (শেরপুর সার্কেল) এবং সহকারী পুলিশ সুপার (আদমদিঘী সার্কেল) নাজরান রউফ সহ অনেকে।