বধ্যভূমি

এনামুল হক টগর

সেদিন বাংলার বিস্তীর্ণ বধ্যভূমির পথ ধরে আমি হাঁটতে হাঁটতে দূর বহুদূর-
শহীদদের কান্নার ধ্বনি প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম নিঃশব্দ প্রেমে হাহাকার।
জীবনের গভীর চৈতন্যে মনে পড়লো পুরনো স্মৃতির বিষাদ ইতিহাস।
একাত্তরের দিনগুলো সংগ্ৰামী জীবন মিছিলে মুক্তির শ্লোগান বিশ্বাস।
শোকাবহ স্বাধীনতার স্মৃতিসৌধ শহীদ মিনার ও বধ্যভূমির মিনার এখানে ছিল না,
শুধু ছিল কাঁদা মাটি,মাঝে মাঝে ফসলের সবুজ মাঠ সোনালী শস্য দীপ্ত নিপুণ।
প্রতিনিয়ত প্রভাতের বুক জুড়ে জেগে উঠতো চেতনার রৌদ্রোজ্জ্বল সূর্য কিরণ।
আজ এখানে মানবতা কেঁদে ফিরে জীবন যন্ত্রণার দহন জ্বালা ও যন্ত্রণা।
রক্তাক্ত দেশপ্রেমে বীর বুদ্ধিজীবীরা দাঁড়িয়ে আছে চেতনায় অক্ষয়!
তাঁরা এখানে সুষমবণ্টন অধিকার আদায়ে নিঃশব্দ শ্লোগান দেয় আগামীর পরিচয়।
প্রিয় বাঙালি জাতি তোমাদের জন্য শুধু তোমাদের সাক্ষাতের জন্য দীপ্তিময়।
এই জীবন যৌবন সুদূর প্রশ্নে প্রশ্নে ক্ষত বিক্ষত এখনে অতিন্দ্রীয় প্রতিক্ষায়।
কতো-দিন কতো-রাত তোমাদের কথা ভেবে ভেবে চিন্তাগ্ৰস্থ বিবেক নয়ন!
তোমাদের সাথে দেখা হবে,কথা হবে,দীর্ঘ পরিবর্তনের স্বনির্ভর বাংলাদেশ নতুন।
কথা শেষে আমাদের বাণীগুলো দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেবে দিকে দিকে সর্বজন।
আগামী  সময়ে দক্ষ বংশধররা সভ্যতার কল্যাণ ছড়াবে স্বপ্ন আর্দশে নিপুণ।
বলো কবি,বলো প্রিয়তম লেখক,বলো প্রিয়তম দেশবাসী তোমরা কেমন আছো?
তোমাদের বন্ধু স্বজন সাথীরা আজ কেমন আছে?
কেমন আছে তোমাদের প্রিয় সন্তানেরা, কেমন আছে আমাদের প্রিয়তম সন্তানেরা?
কেমন আছে বাঙালি জাতি,কেমন আছে আমাদের প্রতিবেশী স্বজনরা?
আর্দশ নীতিবান ও সভ্যতার সৌন্দর্যভরা রমণী এখন কোথায়?
আমি লজ্জায় মুখ ফিরাই,আমি চিৎকার করে বলি বিপন্ন বিষণ্ণ সর্বদায়।
আমি বলতে পারবো না,আমি বলতে পারবো না,সমাজ সংস্কৃতি ভিষণ অসহায়,
প্রিয় শহীদ বুদ্ধিজীবী তোমারা কি মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাও-না জীবন নিরুপায়?
তোমাদের উত্তরসূরীদের জীবন যন্ত্রণার শ্লোগান এখন শুধুই ধ্বনি প্রতিধ্বনি সর্বদায়।
জুলুম নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত মানুষের জীবন এখন যন্ত্রণায় ক্লান্ত যৌবন ক্ষয়।
অনিশ্চিত অবরুদ্ধ আমাদের আগামী উত্তরসূরীদের আর্দশ আজ আঁধারে বিস্ময়।
আমাদের স্বপ্ন বাসনা ও স্বাধীনতার নীতিগুলো আজ দিশেহারা হতাশায় ।
নিষ্ঠুর দানব ও ঘাতকের অত্যাচারে প্রেম আর ভালোবাসা যেন কেঁদে ফিরে বেদনায় বিষাদ।
গ্ৰাম ও নগরের রাস্তায় রাস্তায় মানুষের জীবনগুলো বিবস্ত্র অনিরাপদ।
গভীর বিরহের নিশিথে দেশপ্রেমিক জ্বলে পোড়ে দুঃখ কষ্টে জীবন অঙ্গার।
কবি তোমার কানে কানে গোপনে বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা বলে যাই দুঃখের হাহাকার।
তারাই আজ সবচেয়ে বেশি ধনী,তারাই আজ অধিক অর্থের মালিক বিস্ময় আঁধার!
যারা হত্যা করেছিল বুদ্ধিজীবীদের,যারা হত্যা করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাতক নিষ্ঠুর।
যারা হত্যা করেছিল ত্রিশ লক্ষ বাঙালি প্রজ্ঞাবান দেশপ্রেমিক তত্ত্বজ্ঞানী দিশারী!
অপমান লাঞ্চিত ও ধর্ষণ করেছিল দুই লক্ষ নারী যুবতী মধ্যবয়সী জীবন ব্যথাতুর ।
যারা এদেশের মুক্তি চায়নি যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি,
যারা এদেশের শান্তি চাইনি যারা এদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতি চাইনি।
তাদের গাড়ির চাকায় পিষ্ট অনাগত আগামী বংশধরের ক্লান্ত জীবন!
সময় ও জাতির উত্তরসূরীদের কাছে কি জবাব দেবে হে কবি বিবেকের পরিচয়?
স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকরা মাঝে মাঝে ক্ষমতাধর হয় গাড়ীতে পতাকা উড়ায়।
হায়রে অংশ বিশেষ দুর্বোধ্য মূর্খের নির্বাচনে মনোনিত দানবের ধ্বংস অবক্ষয়।
না বুঝা চেতনাহীন ফসল যেন ব্যর্থ বিফল বেদনার ইতিহাসে কাঁদে নিরুপায়।
আহত স্তব্ধ লোকে লোকান্তরে ঘোরে ফিরে বেদনা বিধুর যন্ত্রণায়।
অঘুম অনাহারী ক্ষুধার্ত মানুষগুলো কাঁদে বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে রিক্ত অসহায়।
তোমরা চিন্তা করো না হে কবি,একদিন এই জীর্ণ-শীর্ণ মানুষগুলোই হবে সার্বজনীন বিপ্লবী।
বুদ্ধিজীবীদের বাণী তাঁরা দিকে দিকে পৌঁছে দেবে আগে পিছে দূর দিগন্ত সজিব।
সেদিন এই সত্য ইতিহাস জানবে দেশ সমাজ ও এই বীর মহান জাতি।
বধ্যভূমির নিঃশব্দ কান্নার আওয়াজ প্রতিবাদ প্রতিধ্বনির আকতি মিনতি।
মানবতার বিনয় আহ্বান চৈতন্যময় সময়ের আধুনিক প্রতিরোধ প্রগতি।
সেদিন জেগে উঠবে দেশপ্রেম সেদিন জেগে উঠবে সুষম বন্টন সুনীতি।
সমগ্র জন্মভূমির পথে পথে ফুঁটবে গুণবান মানুষের নির্মল হাসি প্রজ্ঞা দ্যুতি।
মৌসুমী বাতাস চলমান বাস্তবতার শস্য প্রস্ফুটিত হবে সবুজ সোনালী জমিন।
কিশোর কিশোরী বালক বালিকা ভালোবাসার কল্যাণে হেঁটে যাবে নতুন।
আসন্ন উজ্জ্বল আগামীর ক্ষুধামুক্ত  কর্মকৌশল ও মানবতার সেবায়।
সুন্দর অনুভূতির স্পর্শে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে মহাপ্রেম কল্যাণে উদয়।
জীবনের সব সুন্দর সত্য সুখের মুহূর্তগুলো আলোকিত হবে প্রষ্ফুটিত হৃদয়।
পরাজিত শত্রুর বর্বর আঁধার ভেঙে সভ্যতা প্রজ্বলিত হবে বিশোধন জ্ঞান।
আলোকপ্রাপ্ত প্রভাত কিরণে নতুন সকাল সাম্য চেতনা দেবে মমতার বন্ধন।
ভালোবাসার আন্তরিক আনন্দময় আলোতে আলোতে স্বনির্ভর হবে সর্বজন!
শত যুগের চন্দ্র সূর্য নক্ষত্র হাসবে নতুন রৌদ্রময় দিন ও রাতের কর্ম কল্যাণ।
বিদগ্ধ সাম্য চেতনায় জীবনগুলো জেগে উঠবে শ্রমজীবী কর্মজীবী আর্দশে অভেদ।
স্বাধীনতা প্রিয় জন্মভূমি আমাদের ফসলে বৈচিত্র্যময় হবে সার্বজনীন সুন্দর আবাদ।