নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কয়েকদিনে ব্যাপক অবনতি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা। পুলিশি তৎপরতা না থাকায় বেড়েছে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা। প্রায় দিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্বের সাথে কাজ করছি।
সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ভোররাতে সিংড়া-কলম আঞ্চলিক সড়কের পাটকোল এলাকায় ছিনতাইকারীদের আঘাতে আহত হন কলম কলেজপাড়ার গুড় ব্যবসায়ী আ. সালাম (৬৫)। সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি নিয়ে গেলে রাত ৮টায় মারা যান তিনি। গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার বন্দর বাজার এলাকায় কুরবান আলীর মুদিখানা ও বিকাশের দোকানের তালা কেটে দেড় লাখ টাকা লুট করে ছিনকারীরা। গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ভোররাতে উপজেলার পারশাঐল গ্রামের মো. রনি আহমেদের বাড়ি থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গরু লুট করে ডাকাতরা। গত শনিবার রাত ৮টায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চৌগ্রাম এলাকায় ডাহিয়া ইউনিয়নের মুশিগাড়ি গ্রামের মো. সোহাগ আলী নামে এক চালকের হাত-পা বেধে একটি ইজিবাইক ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। একইদিন ভোররাতে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের বালুভরা এলাকায় ইজিবাইক ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে চক হরিপুর গ্রামের কবির মোল্লা নামের একজন ইজিবাইক চালককে আঘাত করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পথচারীরা।
এছাড়া গত রবিবার রাতে উপজেলার চওড়া গ্রাম থেকে মো. জয়নাল ও মো. নয়ন নামের দুজনের একমাত্র সম্বল দুটি অটোভ্যান চুরি হয়। অপরদিকে রবিবার কুসুম্বী কালিগঞ্জে মোসাদ্দেক সরকারের দুটিসহ মোট ৫টি মুঠোফোন ছিনতাই হয়। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার হোলাইগাড়ি গ্রামে মো. চান হাজীর বাড়ি থেকে নগদ টাকাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি যায়। গত রবিবার সন্ধ্যার পরে পাটকোল এলাকায় ছিনতাইকারীদের আক্রমণের শিকার হন চকলঙ্কা গ্রামের রিপন হোসেন টিপু। অটোভ্যান থেকে তাকে গলায় ছুরি ধরে নামিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় তারা। কলম কলেজপাড়া এলাকার নিহত গুড় ব্যবসায়ী আ. সালামের ছেলে মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা গুড়ের ব্যবসা করতেন। গত সোমবার ভোররাতে ছিনতাইকারীদের আঘাতে আহত হলে হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসার পরে রাতে মারা যায়। তার কান দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এছাড়াও একইরাতে আরও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। বন্দর বাজারে লুট হওয়া বিকাশ ও মুদি দোকনের মালিক কুরবান আলী বলেন, দিনের বেলা আমার দোকানের তালা কেটে নগদ দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। থানায় অভিযোগ করেছি, পুলিশ এসে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে গেছে। আশা করি পুলিশ প্রশাসন তাদের সনাক্ত ও আটক করতে সক্ষম হবে। কুসুম্বী কালিগঞ্জের মোসাদ্দেক সরকার বলেন, আমার পকেট থেকে দুটিসহ ৫টি মুঠোফোন চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া মাঝেমধ্যেই ছিনতাই, চুরির খবর শোনা যায়। আমরা এতে করে আতঙ্কে আছি।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, কিছু ঘটনা ঘটেছে, অভিযোগও পেয়েছি বেশ কয়েকটা। আমরা বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। আঞ্চলিক ও মহাসড়কে টহল জোরদার করা হয়েছে। কলমের গুড় ব্যবসায়ীর মৃত্যুর বিষয়ে পরিবার কোনো অভিযোগ করেনি। পরিবার বলেছে, তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছে। মিজানুর রহমান আরও বলেন, সবগুলো অভিযোগ আমলে নিয়ে আমরা কাজ করছি, আশা করছি দ্রুত এটা রোধ করা সম্ভব হবে।