জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের “অরেঞ্জ ভ্যালি’র” দার্জিলিং জাতের কমলা গাছের ডালে ডালে এবারও থোকায় থোকায় ঝুলছে বড় বড় কমলা। কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। দেখে মনে হচ্ছে এটি ভারতের দার্জিলিংয়ের কোন এক কমলা বাগান।
নয়নাভিরাম এ কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিন দুর দরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছে বাগানে। আনুষ্ঠানিক ভাবে কমলা তোলা শুরু করেছেন বাগান মালিক। মিষ্টি এবং রসালো এ কমলা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩’শ টাকা কেজি দরে। বাগান থেকে এবার ৩৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা বাগান মালিকের।
উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের আড়াই বিঘা জমির ওপরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেছেন উপজেলার বীরহলি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুণ ইকরাম জুয়েল। বাগানটিতে আড়াইশ মত কমলা গাছ রয়েছে।
অষ্টমবারের মতো তার এ বাগানের গাছে এবারও প্রচুর কমলা ধরেছে। কমলার রঙও এসেছে দারুন। ১১ বছর আগে জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতি চারা ৫ টাকা করে ক্রয় করে রোপন করেন জুয়েল। যদিও তার এ বাগান করার ইচ্ছা ছিল না। শুধুমাত্র হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি কমলার চারাগুলো কিনেছিলেন। এখন সেই আড়াইশ গাছ থেকে বাৎসরিক ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছেন কৃষি উদ্যোক্তা জুয়েল।
গত বছর এ বাগান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছিলেন তিনি। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সরবরাহ করেছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাগানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে শেষ পর্যন্ত ২০ টাকা প্রবেশ মুল্যে নির্ধারণ করেন বাগান মালিক। তার পরেও ভীড় সামাল দিতে মালিক সহ ৮ জনকে হিমসিম খেতে হয়েছে।
এবার ৩৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন বাগান মালিক। দর্শনার্থীদের ভীড় সামলাতে এবার আগে ভাগেই বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছেন। কড়া নিরাপত্তা সহ বাগানে প্রবেশের জন্য ২০ টাকা মুল্যের টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন। বাগানের ভিতরে কিছু গরম কাপড় বিক্রিরও ব্যবস্থা রয়েছেন। দর্শনার্থীরা কমলা বাগান দেখতে এসে বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপশি স্বল্প মুল্যে পরিবারের জন্য গরম কাপড়ও কিনতে পারবেন।
উদ্যোক্তা জুয়েল জানান, তার বাগানটি দার্জিলিং জাতের কমলা বাগান। এ বাগানের কমলা স্বাদে দার্জিলিংয়ের কমলার মত। অর্গানিক পদ্ধিতিতে তিনি এ বাগান করেছেন। কোন কীট নাশক ব্যবহার করা হয় না। বাগানের আড়াইশ’ গাছ থেকে এবার ৩শ’ মন কমলা হতে পারে বলে আশা তার। আড়াই বিঘার এ বাগানে তার খরচ হয় চার লাখ টাকা। ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা গাছ ৫০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এটি একটি অর্থকরি ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায় বলে জানান তিনি।
কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে কমলা চাষ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান সফল এ উদ্যোক্তা।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের সূত্রমতে, পীরগঞ্জে জুয়েলের বাগান ছাড়াও জেলায় চার দশমিক আট হেক্টর জমিতে কমলা চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও মালটার বাগান আছে প্রায় দেড়’শ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এ বাগানের কমলা খুবই সুস্বাদু ও ভালো। তাই এ বাগানের কমলা দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায় এবং সকল জায়গায় আমাদের দেশে উৎপাদিত কমলা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। তাছাড়া এটা একটা পর্যটন শিল্প হিসেবেও কাজ করছে। কৃষিবিভাগ থেকে লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির জানান, জুয়েলের কমলা বাগান একটি পরিচিত নাম ও ব্রান্ড। জুয়েলের মত কেউ এমন কমলা বাগান করতে চাইলে তাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে।