সঞ্জু রায়, বগুড়া:
সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগীয় ধর্মঘট বগুড়াতে চলছে। সকাল থেকেই জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন বগুড়া ছেড়ে যাচ্ছে না। পরিবহন নেতারা বলছেন, ধর্মঘটের কারণে বগুড়া থেকে ৩৪টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন। এর আগে গত শনিবার নাটোরে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভায় দাবি আদায়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ঠনঠনিয়া বাসট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, সড়কে গণপরিবহন কোন চলাচল নেই। চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সব বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যস্ততা না থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা সড়কের পাশে আড্ডায় মেতে উঠেছেন। তবে সড়কে পণ্যবাহী বাহনের ব্যস্ততা ছিল প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক। তুলনামূলক অন্যান্যদিনের চাইতে মূল সড়কগুলো ফাঁকাই ছিল। তবে সড়কে ছিল পর্যাপ্ত যাত্রী। অনেকে ব্যাগ হাতে সড়কে দাড়িয়ে দূরপাল্লার যানের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
চারমাথা বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়েছিলেন জাহিদ হাসান। বাড়ি গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে। ধান কাটার কাজে তিনি এসেছিলেন কাহালুর বিবিরপুকুর এলাকায়।
জাহিদ বলেন, ‘ আমরা ১৫ জন ধানকাটা জন্য সাঘাটা থেকে বগুড়ায় এসেছি। প্রায় দুই সপ্তাহ কাজ শেষে আজ বাড়িতে ফিরবো। তবে বাস না থাকায় এখানে এসে সবাই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে আছি। এখন সিএনজিতে যেতে হবে আমাদের। বাসে চড়ে বাড়িতে যেতে ভাড়া লাগতো ৬০ টাকা এখন সিএনজিতে লাগবে ১৭০ টাকা করে। আমাদের মতো দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের জন্য দুই বেলা না খেয়ে থাকার সমান।’
এ টার্মিনালে মুরাদ হোসেন নামে এক বেসরকারি চাকুরিজীবীর সঙ্গে কথা হয়। চাকরির সুবাদে প্রতিদিন বগুড়া থেকে নাটোর যাওয়া আসা করেন তিনি । মুরাদ জানান , ‘প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। কয়েক দিন পর পর পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা ধর্মঘটের ডাক দেন। এতে অন্য কারও কিছু না হলেও যাত্রীদের হয়রানি এবং ভোগান্তির শিকার হতে হয়। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।’
ইসমাইল হোসেন নৌ-পরিবহনে চাকুরি করেন। বগুড়া থেকে তার গন্তব্য ঢাকার আরিচাতে। বাস না পেয়ে সিরাজগঞ্জ অব্দি ২০০ টাকা চুক্তিতে ট্রাকে চড়েছেন তিনি। ইসমাইল জানান, ‘বাসে গেলে ভাড়া লাগতো ১৫০ টাকা। এখন ২০০ টাকা লাগতেছে। টাকা বড় কথা না। টাকার চাইতে এখন ভোগান্তি বড় হয়ে গিয়েছে। এই ভোগান্তি দেখার কেউ নেই। ‘
বগুড়া-ঢাকা রুটের বাসে চালকের সহকারীর কাজ করেন সেলিম মিয়া। তিনি জানান, ‘ বাস মালিকেরা বলেছে বাস বন্ধ। বিএনপির সমাবেশের জন্য বাস নাকি বন্ধ থাকবে। ‘
রাজশাহী বিভাগীয় মালিক শ্রমিক যৌথ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দশ দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকেরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বগুড়ার অভ্যন্তরীণসহ ৩৪টি রুটের প্রায় ১২শ বাস চলাচল বন্ধ আছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।’