নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর শহরতলীর দত্তপাড়া হাটের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। শুধু দখল নয়, মাঝে মাঝে সরকারি খাস জায়গার দখলদারিত্ব লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত হাটের নির্ধারিত ১২ শতক জায়গা দখল করে রেখেছেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি।
কেউ কেউ সেখানে গড়ে তুলেছেন স্থায়ী অবকাঠামো। ফলে সরকারি জায়গার হাটে স্থানীয় কৃষকরা তাদের কৃষিজ পণ্য বেচা কেনা করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দত্তপাড়ায় নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে হয় কৃষকদের। হাটের জায়গায় অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখলকৃত অবকাঠামো লাল দাগ দিয়ে সনাক্ত করা হয়েছে। তবে এখনও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামেনি প্রশাসন। এমতাবস্থায় দ্রুত অবৈধ দখল উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে দখল উচ্ছেদে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দত্তপাড়া হাটের পাশ দিয়ে ঢাকা-নাটোর মহাসড়কের দ্রুত গতির যানবাহন চলাচল করছে। এরই মাঝে জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মহাসড়কের পাশে পণ্য কেনাবেচায় মগ্ন রয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। সরকারি জায়গায় দখলদারদের স্থাপনা থাকায় তারা নির্ধারিত স্থানে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না।
জানা গেছে, শহরতলীর দত্তপাড়া একটি শিল্প এলাকা। দীর্ঘদিন ধরেই দত্তপাড়া হাটের সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত ১২ শতক জায়গা দখল করে রেখেছেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। সেখানে কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন স্থায়ী অবকাঠামো। এসব অবকাঠামো কেউ ব্যবহার করছে, কেউ খালি ফেলে রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দখলকৃত জায়গার দখলদারিত্ব ক্রয়-বিক্রয় হয়। এসব স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসনের লোকজন হাটে গিয়ে দখলকৃত অবকাঠামো লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। এর কিছুদিন পরে দখলদারদেরকে উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও উচ্ছেদ অভিযানে নামেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
স্থানীয় কৃষক রেজাউল করিম গাজী জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৈনন্দিনের ক্রেতা বিক্রেতার কর্মযজ্ঞ চলে দত্তপাড়া বাজারে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দখলকৃত স্থানে যে যার মতো গড়ে তুলেছে স্থায়ী স্থাপনা। কেউ কেউ হাটের জায়গায় স্থায়ী অবকাঠামো করে অযথাই ফেলে রেখেছেন। মাঝে মাঝে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় চলে দখলদারিত্ব কেনাবেচাও। কয়েকদিন আগেও আব্দুর রাজ্জাক দুই লাখ টাকায় আরেকজনের দখল কিনেছেন।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী সেন্টু হোসেন জানান, বাজারের জায়গায় হুসেন মিয়া, মোতালেব, শরৎ, নুর আলম পাকা দোকান করে দখল করে রেখেছেন। এক-একজনের একাধিক পাকা দোকান ঘর রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন জায়গা দখল করে অযথাই পরিত্যাক্ত করে ফেলে রেখেছে। তারা নিজেও ব্যবসা করেন না। অন্যদেরও বসতে দেননা।
অবৈধ দখলদার হুসেন মিয়া জানান, বহুবছর ধরে আমরা হাটের জায়গায় ব্যবসা করে আসছি। এখন সরকার ভেঙ্গে দিলে আমাদের কিছুই করার নাই। কয়টা পাকা দোকান আছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, তার মাত্র তিনটি পাকা দোকানঘর রয়েছে।
আরেক দখলদার নূর আলম জানান, আজ থেকে ৫০ বছর আগে তার বাবা গণি শিকদার ছাদ ঠালাই করে তিন রুম বিশিষ্ট দোকানঘর করেছিল। বাবা মারা যাবার পর তিনি সারের ব্যবসা করছেন। সরকারি জায়গায় দোকান থাকলেও এর বৈধতা সম্পর্কে জানেন না বলে জানান তিনি।
দত্তপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান জানান, দত্তপাড়া বাজারের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। এরপর প্রশাসন থেকে দখলকৃত স্থাপনার চিহ্নিত করে লাল দাগ দিয়েছে। এর কিছুদিন পর সকল অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ নোটিশও করেছে প্রশাসন। এখন আমাদের দাবী দ্রুত দখলদারদের উচ্ছেদ করা হোক।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, দত্তপাড়া হাটে অবৈধ দখলের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের উচ্ছেদ করা হবে। ইতোমধ্যে অবৈধ স্থাপনা সনাক্ত ও নোটিশ করা হয়েছে। দখলদাররা নিজে থেকে সরে না গেলে তাদের দ্রুতই উচ্ছেদ করা হবে।