হাঁটু ও হাতের উপর ভর করে চলা চাঁদ হতে চায় প্রকৌশলী

চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় চাঁদ বাবু। ছোটবেলা থেকেই হাটু গেড়ে দুই হাতের উপর ভর করে চলাফেরা করে সে। হাতের কব্জি দুটোও বাঁকা। হতদরিদ্র বাব ইটভাটা শ্রমিক। বসতভিটা ছাড়া এক টুকরো জায়গা নেই তাদের। তাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পিতার সামান্য আয় দিয়ে কোনোমতে চলে ৬ জনে সংসার। এতে অর্থ অভাবে চিকিৎসা হয়নি চাঁদের। তবে শারীরিক নানা জটিলতা থাকা সত্ত্বেও থেমে থাকেনি চাঁদ। এবছর সে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ভেড়ামেরা উদয়ন একাডেমী থেকে এসএসসি ভোকেশনাল শাখায় কম্পিউটার ট্রেডে 4.75 জিপিএ পেয়ে পাশ করেছে। চাঁদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে সে প্রকৌশলী হতে চায়। চাঁদ উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে। পরিবারের সদস্যরা জানায়, শারীরিক বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে জন্মায় চাঁদ। কিন্তু নিরক্ষর ও হতদরিদ্র পিতা-মাতা প্রথমে বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চাঁদের হাতের কব্জি ও পা বাঁকা হতে দেখে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দেখান পিতা আব্দুর সবুর। সেখানকার চিকিৎসক ওই হাসপাতালে চাঁদের চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানান। পরে চাঁদকে পাবনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। তবে টাকার যোগান না দিতে পারায় চাঁদের আর চিকিৎসা হয়নি। এতে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। এদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধতাকে দূরে ঠেলে চাঁদ স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পাস করে ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমীতে ভর্তি হয়। সেখানকার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাঁদকে বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। তার চলাফেরার জন্য একটি হাতে চালানো চাকাওয়ালা ভ্যানের ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশীরা। এত সমস্যার মধ্যেও পরিবারের চরম অভাবের কারণে চাঁদকে অর্থ উপার্জনের দিকে ছুটতে হয়। অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার পরেই সে গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ বিল তুলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে মাসিক কিছু টাকা আয় করতেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি বই খাতা কলমসহ নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেন। চাঁদ বাবু বলেন, দুই হাটু ও হাতে চলাফেরা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে কৃষ্ণের সৃষ্টি হত। কিছুদিন বিশ্রাম থেকে আবারও হেঁটে স্কুলে গিয়েছি। আমি ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চাই। কিন্তু আমাকে পড়াশুনা করানোর আর্থিক সক্ষমতা পরিবারের নেই। এখন কেউ সহযোগিতা করলে তবেই আমার পড়াশোনা সম্ভব। তাই আমি সবার সহযোগিতা চাই। বাবা আব্দুর সবুর বলেন, ছেলে পড়তে চায়। কিন্তু আমার তো খরচ দেয়ার সামর্থ্য নাই। এখন কি করব বুঝতে পারছি না। ভেড়ামারা একাডেমীর প্রধান শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক বলেন, চাঁদ বাবু মেধাবী। তবে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই বিদ্যালয় থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। পরবর্তীতেও তাকে সহযোগিতা দিতে পারলে সে আরো ভালো ফলাফল করতে পারবে। ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে চাঁদের এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত। তার উচ্চশিক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।