ছারছীনা থেকে মোঃ আবদুর রহমান : ছারছীনা দরবার শরীফের ১৩২তম বার্ষিক ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার বাদ মাগরিব জিকির ও তা’লীমের পর ভাষণে গদ্দীনসীন পীর ছাহেব কেবলা একথা বলেন।
তিনি বলেন – ছারছীনা দরবার শরীফ একটি আধ্যাত্মিক দরবার। এখানে এসে যারা বাইয়াত গ্রহণ করেন, তারা মূলত: আমলী ইছলাহ ও তরীকা মশকের মাধ্যমে মহান আল্লাহর পেয়ারা বান্দা হওয়ার জন্যই বাইয়াত গ্রহণ করে থাকেন। নিয়মিত তরীকা মশকের মাধ্যমে একজন বান্দা প্রকৃত পক্ষে কামিল মু’মিন হিসেবে রুপান্তরিত হন। তার অন্তরাত্মার কুরিপুগুলি দূরীভূত হয়ে তদস্থলে সে আখলাকে হাসানার গুনাবলীর দ্বারা ভূষিত হয়ে থাকে। তাইতো রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা প্রদানের উদ্দেশ্যে”। বলা বাহুল্য দরবারে নববীতে বসে সাহাবায়ে কেরাম একান্ত ভাবে এই চারিত্রিক উৎকর্ষতাই অর্জন করতেন । তাই বর্তমান সময়ে হক্কানী পীরের সোহবত এখতিয়ার করে নবী ওয়ালা ও সাহবী ওয়ালা চরিত্র অর্জনের কোশেশ করা হয়ে থাকে।
হযরত পীর ছাহেব কেবলা বইয়াত গ্রহণের পর মুরীদ হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে চিশতিয়া তরীকার প্রথম সবক প্রদান করেন। তিনি বলেন, যারা মুরীদ হলেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জুমার নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করবেন। নেসফে সাক গোল জামা পরবেন। মাথায় টুপি ও পাগড়ী পরিধান করবেন। দঁড়ি ছাটবেন না,কাটবেন না। বিড়ি-সিগারেট পান করবেন না। হালাল খানা খাবেন, হারাম থেকে পরহেজ করবেন। ঘরে বাইরে পর্দা করবেন। নিয়মিত ওজীফা পালন করবেন। অজীফার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন- প্রত্যহ বাদ মাগরিব সুন্নাতের পর দুই দুই রাকায়াত করে ছয় রকায়াত আউয়াবীনের নামাজ পড়বেন। অত:পর তিনবার সূরা ফাতিহা, দশবার সূরা ইখলাস ও এগার বার দরূদ শরীফ পড়ে ছাওয়াব রেসানী করবেন। এরপর নিয়্যাত করে তিনশত বার নফী-এছবাত জিকির করবেন। বাদ এশা একশতবার দরূদ শরীফ পড়বেন। বাদ ফজর জায়নামাজে বসে দরূদ শরীফের আমল করবেন। তারপর সূর্য উদিত হবার পর চার রকায়াত ইশরাক নামাজ আদায় করবেন। সকলকে তা’লীমের হালকায় বসায়ে হযরত পীর ছাহেব কেবলা জিকিরের তা’লীম দেন এবং দরূদ শরীফ মুখে মুখে পাঠ করান। দরূদ শরীফ আমলের বিষয়ে তিনি বলেন-নিয়মিত দরূদ শরীফের আমল করলে ভাগ্য ভাল হলে স্বপ্নে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যিয়ারত নসীব হতে পারে।
গতকাল দ্বিতীয় দিবসে মাহফিলে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন- বরিশাল বিভাগীয় ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, পিরোজপুর জেলার পুলিশ সুপার, স্বরূপকাঠী পৌর সভার মেয়র ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী।
বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষকদের একক সংগঠন জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের মহাসচিব বলেন- ছারছীনা শরীফের পীর ছাহেব কেবলা জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। জমিয়তের সাবেক সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মরহুম মাওলানা এম. এ. মান্নানের সময়ে ছারছীনার মরহুম পীর ছাহেব কেবলা হযরত মাওলানা শাহ্ আবু জা’ফর মোহাম্মাদ ছালেহ (রহ.) জমিয়তে ঘোর দুর্দিনে শক্ত হাতে জামিয়তুল মুদার্রেসীনকে রক্ষা করেছিলেন। বিগত জোট সরকারের সময়ে যখন জমিয়তের অস্তিত্ব সংকট ঘণীভূত হয়েছিল তখন ছারছীনা শরীফের বর্তমান হযরত পীর ছাহেব কেবলার নির্দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছি। এখনো আমরা হযরত পীর ছাহেব কেবলার রূহানী দোয়া নিয়ে সম্মুখ পানে এগিয়ে চলেছি। তিনি বলেন, ছারছীনা দরবার শরীফ আলেম-ওলামার দরবার, হক্কানী পীর- মাশায়েখের দরবার, সুন্নাত তরীকা আমলের দরবার, মাদরাসা শিক্ষাকে প্রসারতা দানকারী দরবার। ছারছীনা দরবার শরীফের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রায় সাড়ে চার হাজার আলিয়া নেসাবের মাদরসা কায়েম হয়েছিল। তিনি দীন প্রচারের ক্ষেত্রে ছারছীনার পীর ছাহেব কেবলাদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
মাহফিলের দ্বিতীয় দিবসে ওয়াজ ও বক্তৃতায় অংশ গ্রহণ করেন- বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর নাযেমে আ’লা অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ শরাফত আলী, উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ রূহুল আমিন ছালেহী, শাইখুল হাদিস মাওলানা মোঃ আব্দুল গফ্ফার কাসেমী, মুফতী মাওলানা মোঃ হায়দার হুসাইন, বাংলাদেশ যুব হিযবুল্লাহর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা কাজী মোঃ মফিজ উদ্দীন।
বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছার উদ্দীন আহমদ হুসাইন আগত জনতাকে বর্তমান ফেতনা-ফাসাদের যুগে আমলের উপর সুদৃঢ় থাকার পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন- বর্তমানে সঠিক ইসলামের বুলি আউড়িয়ে ইসলাম নামধারী আনেকে আমাদের পূর্বসূরী হক্কানী আউলিয়ায়ে কেরামের নীতি ও আদর্শকে ভুল প্রমাণিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সকলকে তাদের মধু মাখা বিষের কবল থেকে সকলকে সাবধানতার সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদায় অটুট বিশ^াস ও সুন্নাত তরীকা মোতাবেক আমলী জিন্দেগী গঠন করতে আহবান জানান।
আজ মাহফিলের শেষ দিন। বাদ জোহর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ ও শান্তি কামনা করে হযরত পীর ছাহেব কেবলা আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করবেন।