কামরুল হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী এলাকায় নানা রোগের মহৌষধ হিসেবে পরিচিত ননী ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।৩৫ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে ননী ফলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তা বাবুল আহাম্মেদ।
জানাগেছে,ননী ফলের রস খেলে প্রায় সাথে সাথে ব্যথা নিরসন হওয়ায় অনেকে এটাকে পেইন কিলার বলে অভিহিত করে থাকেন। এটা মূলত আফ্রিকা অঞ্চলের একটি ফল। তবে ফলটি ক্রান্তীয় অঞ্চল অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশেও জন্মায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। ননী গাছে বারো মাস ফল ধরে। যশোর, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলায় এ ফলের জনপ্রিয়তা রয়েছে। দেশের আবহাওয়া ননী ফল গাছ চাষের উপযোগী। তাই অনেকেই ননী ফলের বাণিজ্যিক চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
বর্তমানে এ ফল বাজারে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এর একটি চারা ৪০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ননী গাছের পাতা ও ফল মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত এ ফলটি খুব বেশি পরিচিতি পায়নি। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ননী ফলের রস বা জুস বোতল ভর্তি করে বাজারজাত করছে। ননী ফলে ভিটামিন এ, সি, ই, বি, বি-২, বি-৬, বি-১২, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফলিক এসিড, প্যাণ্টোথেনিক এসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার, অন্যান্য মিনারেলসহ প্রায় ১৫০টিরও বেশি ওষুধি গুণে পরিপূর্ণ রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ননী ফলের রসে উচ্চ রক্তচাপ কমে, শারীরিক শক্তি বাড়ে, প্রদাহ ও হিস্টামিন প্রতিরোধ করে। ননী ফল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
উদ্যেক্তা বাবুল আহাম্মেদ জানান,তার বাড়ি বরিশালে।একজন হাকিমের মাধ্যমে এলেঙ্গায় এসে ব্যবসা শুরু করেন।এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এলেঙ্গায় ভাড়াবাসায় বসবাস করছেন।হাকিমী ব্যবসাসূত্রে তিনি ননী ফল ও গাছের সাথে পরিচিত হন। ফলটির গুণাগুন জানতে পেরে তিনি ননীগাছ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিস্তারিত জানতে তিনি ভারতে অনুষ্ঠিত ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশ নেন।সেখান থেকে দেশে ফিরে এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী এলাকায় দুই বছর আগে ৩৫ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ৫০টি ননী গাছের চারা কিনে এনে রোপণ করে ননী ফল গাছের বাগান তৈরি করেন।বাগানের এক পাশে ননী গাছের নার্সারিও গড়ে তুলেছেন তিনি। বাকি অংশে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে ননী গাছ রোপন করেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে তার বাগানে ২৮০টি পরিণত ননী ফল গাছ আছে। এ বছর ৭০টিতে ননী ফল ধরেছে। অনেকেই কৌতুহলী হয়ে তার ওই বাগান দেখতে আসেন। যাওয়ার সময় গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান।
তিনি আরও জানান,এই ফলের গুণাগুন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা ভালো ধারণা নেই। তাই টাঙ্গাইলে তেমন বিক্রি হয় না। ননী ফলের হাজারো গুণ থাকায় আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই বাগান দেখতে আসেন।
সরেজমিনে ননী গাছের বাগান দেখতে আসা মুক্তার আলী জানান, তিনি এ ফলের নাম আগে কখনো শুনেন নাই। ইণ্টারনেট থেকে জানতে পারেন,ননী ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্ট্রিক ও চর্ম রোগের কাজ করে- তাই আগ্রহ নিয়ে বাবুল আহাম্মেদের বাগান দেখতে এসেছেন। যাওয়ার সময় একটা গাছ ও কিছু ফল কিনে নিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
বাগান দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম, আনছের আলী, নয়ন সিকদার সহ আরও কয়েকজন জানান, ননী ফল সম্পর্কে জেনে তারা ৬-৭ বন্ধু পাশের এলাকা থেকে এসেছেন। এর আগে তারা এই ফলের খোঁজ করেও পাননি। এই ফল এলার্জি ও হাড়ের জয়েণ্টের ব্যথায় খুব উপকারী- ওনার বাগান থেকে ননী ফল কিনতে এসেছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাশার জানান,বাবুল আহাম্মেদ তাদের একজন ভালো উদ্যোক্তা। তার চাষকৃত ননী ফল গাছে এবার ফল ধরেছে। এই ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তারা এগুলো সংগ্রহ করে নিজেরাই জুস তৈরি করে খাচ্ছে। গুণাগুণের দিক থেকে ননী ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক। পুরাতন বাতের ব্যথা নিরাময়ে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান,দেশে ভেজষ গাছ কমে যাচ্ছে।নিজেদের স্বার্থে ভেজষ গাছ লাগানো দরকার। ভেজষ উদ্ভিদে বাবুল আহাম্মেদের মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে শুরু করেছে- এটা আশার কথা।