ইয়ানূর রহমান : যশোরের ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে প্রতিনিয়ত এসব বালু বিক্রিও হচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’একটা মোবাইল কোর্ট বসিয়ে
বালু তোলা মেশিন আর বালু জব্দ করা হলেও কোনোভাবেই এই বালু উত্তোলন ঠেকানো যাচ্ছে না। আর এ কারণে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিধ্বস সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা করছেন এলাকাবাসি।
অভিযোগ উঠেছে জব্দকৃত মালামাল আর বালু টেন্ডারের মাধ্যমে একেবারে পানির দামে আবারও সেই বালু উত্তোলনকারীদের কাছে বেঁচে দেওয়া হয়। সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় বারবাকপুর, হাড়িয়াদেয়াড়া, মিশ্রিদেয়াড়া, মাগুরা গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে কপোতাক্ষ নদের মাঝখানে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপ দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কোথাও সেই বালু দিয়ে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে
আবর কোথাও বিক্রির জন্য বালু মজুদ করে রাখা হচ্ছে। ঝিকরগাছা পৌরসভার শেষ সীমানায় হাড়িয়াদেয়াড়া তেতুলতলা এবং সালাফি মসজিদ সংলগ্ন দুইটি পুকুর এই বালি তুলে ভরাট করা হয়েছে। কপোতাক্ষ নদ খনন কাজের দোহাই দিয়ে স্হানীয় কিছু দূর্বৃত্তের সহায়তায় ঠিকাদার বা সাব ঠিকাদার এর লোকেরা বালি তুলছে।
অনেক জায়গায় এর সাথে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিও জড়িত আছে। মাগুরা ইউনিয়নের
ফুলতলা ব্রীজের নীচে কপোতাক্ষ নদ খননের কাজ পাওয়া ঠিকাদার শহীদ নদের মাঝে
শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। বারবাকপুর, হাড়িয়াদেয়াড়া অংশে সাব ঠিকাদার আওয়ালের সাথে যোগসাজশে বিভিন্ন পুকুর, জলাশয়, ডোবা ভরাট কার্যক্রম চলছে। মিশ্রীদেয়াড়া বাজার মসজিদের নীচে দুইটি শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে স্হানীয় ইউ পি সদস্য জামাল হোসেন বালু উত্তোলন করছে। বালু তুলে
সংরক্ষণের জন্য নদের সাথেই অবস্হিত হাতেম আলী গংদের ৬/৭ বিঘা জলাকারের একটি পুকুর আড়াই লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়ে সেখানে বালু রাখছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামাল মেম্বার জানান, আমি ঠিকাদারকে ৫ হাজার টাকা দিন চুক্তিতে ৪টি মেশিন ভাড়া দিয়েছি। ঠিকাদার (শহীদ) নিজেই বালু তুলছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ভিন্ন তথ্য। মিশ্রী দেয়াড়া বাজার জামে মসজিদের সামনের মাঠে জামাল মেম্বার নিজে বালু উত্তোলন করে রেখেছেন।
প্রতিবেদক সেখানে থাকাকালীন ট্রলি বোঝাই করে বালু নিয়ে যেতে দেখা গেলো।
জামাল মেম্বার প্রতিবেদককে জানালেন ৩০০ টাকা ট্রলি ভাড়া করে পাশের একটি মসজিদে ফ্রী বালু দেওয়া হচ্ছে। বালু কোথায় যাচ্ছে খুজতে খুজতে সেই বালু পাওয়া গেল হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামের রিপনের বাড়িতে। ট্রলি চালক সোহাগ বললেন, প্রতি ট্রলি বালুর জন্য জামাল মেম্বার ভাড়া বাদে ৩৫০ টাকা করে নিচ্ছে।
হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামের নুরুর ছেলে রহমান, সোহান, মিশ্রীদেয়াড়ার সাহেব আলী,
আল আমিন, আংগারপাড়ার পিন্টু, মুন্নার মাধ্যমে জামাল মেম্বার গত ৩ বছর ধরে
এই অবৈধ বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী বাপা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশে যে শুন্যতার সৃষ্টি হয় তাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিধ্বস হওয়ার আশংকা আছে। এবং পাশের কয়েকটি গ্রামের মাটি ধ্বসে সেই শুন্যতা পুরন হবে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, ইতিমধ্যে আমরা এই বালু উত্তোলকদের বিরুদ্ধে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এখন আমরা সরাসরি মামলার আশ্রয় নেবো এবং কোর্টের মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।