সঞ্জু রায়, বগুড়া: বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের মাস্টার রোলের কর্মচারীরা সোমবার সকালে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ পালন করেছে।
পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: শাহজাহান আলী কর্মচারীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়৷
কলেজ প্রশাসন ও কলেজের কর্মচারী কল্যান পরিষদের সূত্রে জানা যায়, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে প্রায় ১৭৫ জন কর্মচারী মাস্টার রোলে কাজ করেন। এদের মধ্যে অফিস সহায়ক, গার্ড, ঝাড়ুদার ও সুইপার রয়েছেন। এসব কর্মচারীদের বেশিরভাগই এই কলেজে দীর্ঘ ২০ থেকে ৩০ বছর যাবত কাজ করে আসছেন। কলেজ প্রশাসনই তাদের বিভিন্ন সময় নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়েছে।
কর্মচারীদের দাবি, দীর্ঘ সময় যাবত চাকরি করলেও তাদের বেতন বেড়েছে নাম মাত্র। একজন ঝাড়ুদার এই দ্রব্যেমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ২ হাজার ২৫০ টাকার বেতন পান। এছাড়াও অফিস সহায়ক পদে কর্মরত একজন কর্মচারী সর্বোচ্চ ৯ হাজার ২০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। এই বছরের শুরু থেকেই কলেজের কর্মচারীরা অধ্যক্ষের কাছে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ এর প্রেক্ষিতে গত জুলাই মাসে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলীসহ কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মাহতাব হোসেন মন্ডলকে নিয়ে বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা যাচাইয়ে ১৪ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বেতন বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দিয়ে প্রত্যেক কর্মচারীর ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করে। সেই প্রতিবেদন এই মাসের ১ নভেম্বর অধ্যক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়।
কর্মচারীদের অভিযোগ, প্রতিবেদনে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশের পরেও এই মাসের বেতন আগের হিসেবেই দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কবে নাগাদ এই বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ কার্যকর করা হবে সেই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনাও জানায়নি৷
তাদের আরোও অভিযোগ, কলেজে শিক্ষার্থীদের থেকে কর্মচারী কল্যান ফান্ড বাবদ টাকা আদায় করা হয়। ভর্তি ও প্রতি বর্ষে ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের থেকে ৪৫০ টাকা করে আদায় করা হতো৷ কয়েকমাস আগে থেকেই কর্মচারী কল্যান তহবিলে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা ফি আদায় করা হচ্ছে। এরপরও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এছাড়াও কলেজে মাস্টার রোলে চাকরি করা প্রায় ৪০ জন কর্মচারীকে এই অধ্যক্ষ বিভিন্ন সময় মৌখিক ভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। এরপর থেকে তাদের বেতন ভাতাও বন্ধ আছে । শুধুমাত্র মৌখিক অব্যাহতি পেয়ে এই মানুষগুলো কাজ ছাড়া মানবেতন জীবন যাপন করছে বলে জানান তারা। এই ৪০ জন কর্মচারী মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছর পুরোনো কর্মচারীও আছেন।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের কর্মচারী কল্যান পরিষদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল আলম লিটন জানান, তাদের বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা শিক্ষকরাও পেয়েছেন। তারপরও তাদের বেতন বাড়ানো হচ্ছেনা। তারা তাদের পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন বলে জানান তিনি।
কর্মচারী কল্যান পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জানান, অধ্যক্ষ স্যার তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মেনে নেওয়া আশ্বাস দিয়েছেন। এজন্য তারা বিক্ষোভ স্থগিত করেছেন। তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে৷
সার্বিক প্রসঙ্গে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী জানান, কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি পুরোপুরি যৌক্তিক। এজন্য তারা কমিটির মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। সেই বিষয়ে তারা একমতও হয়েছে। তবে সব কিছুর আনুষ্ঠানিক কিছু নিয়ম আছে। অতি দ্রুত তাদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে এতে অন্য কোন ধুম্রজাল সৃষ্টির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন কলেজ পরিবারের সদস্য হিসেবে শুরু থেকে তাদের ভাল মন্দ সবদিক কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষই দেখে। শুধু তাই নয় শিক্ষরাও তাদের প্রতি আন্তরিক ও সহমর্মি। তাই যেকোন সমস্যা সুষ্ঠুভাবে সমাধানেই মঙ্গল বলে মন্তব্য করেন অধ্যক্ষ শাহজাহান।