সমবায় সমৃদ্ধ অর্থনীতির ভিত গড়ে

ইকবাল কবীর রনজু
আজ ৫ নভেম্বর শনিবার সারা দেশে পালিত হচ্ছে ৫১তম জাতীয় সমবায় দিবস। “বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন” এ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবার দিবসটি উদযাপন করা হয়। দেশের জনগনের মাঝে সমবায়ের ধারণা প্রসারের জন্য এবং সমবায় আন্দোলন যেন আরো বেশি গতিশীল হয় মূলত এ লক্ষ্যে এ দিবসটি উদযাপন করা হয়।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইংল্যান্ডে সমবায় আন্দোলনের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারকে পরিণত হয়েছে। ১৮৪৪ সালে আধুনিক সমবায় আন্দোলনের যে যাত্রা শুরু হয় কালক্রমে সেপথে এগিয়ে সমবায়ীরা সফলতার স্বাক্ষর রাখে। কৃষি ঋণের অভাবে কৃষকরা যখন মহাজনের নিকট থেকে উচ্চ সুদে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়া ঋণ নিয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছিলেন তখন এর প্রভাবে ১৮৭৫ সালে দক্ষিণ ভারতে কৃষক বিদ্রোহ হয়। ১৯০৪ সালে বৃটিশ ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড কার্জন সমবায় ঋণদান সমিতি আইন জারী করেন। একের পর এক সমবায় সমিতি গড়ে উঠতে থাকে। পরে বিভিন্ন অঞ্চলে সমবায় আইন প্রণয়ন হয়েছে, সংশোধন হয়েছে, সমবায় ব্যাংক গড়ে উঠেছে, দিনকে দিন মানুষ সঞ্চয়ী হয়ে উঠে সমবায়ের মাধ্যমে মুক্তির পথের সন্ধান করেছে, এখনও করছে।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে প্রয়োজন উৎপাদনমূখী সমবায় ভিত্তিক সমাজ গঠন। উন্নত দেশ ও বিশ^ গড়তে, অর্থসামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও দারিদ্র বিমোচনে সমবায়ী মনোভাব একান্তই জরুরী। সমবায়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ সুগম হয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উৎপাদনমুখী সমবায়ী বাড়ানো এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। যে কোন সংকট থেকে উত্তরণে পারস্পারিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণ যতটা সহজে সম্ভব একক প্রচেষ্টায় তা সম্ভব নয়।
কৃষি খাতের কথাই যদি মানদন্ড হিসেবে ধরি তাহলে আমরা দেখতে পাই সমবায়ের মাধ্যমে সহজেই বড় বিনিয়োগ করা যায়। পণ্য বাজারজাত করণ সহজ হয়। পণ্যের ন্যায্য মূল্যও পাওয়া যায়। তদ্রুপ মৎস চাষ, পশুপালন, দুগ্ধ উৎপাদনের মতো উৎপাদনশীল খাতে সমবায়ীরা সফলতা পাচ্ছে। তারা পুষ্টির চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখছে। সমবায়ের মাধ্যমে নি¤œ আয়ের মানুষ যেমন সহজেই ক্ষুদ্র ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারেন তেমনি অর্থিক সঙ্গতি সাপেক্ষে মধ্যম আয়ের মানুষও সমবায়ের মাধ্যমে বৃহত পরিসরের ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্যোগ নিতে পারে। আবাসন খাতে সমবায়ের ইতবাচক প্রভাব ব্যপক ভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহরঞ্চালে এক খন্ড দামী জায়গা কিনে একজন মানুষের পক্ষে বাড়ি করা যখন কঠিন হয়ে পরছে, সাধ্যে কুলোচ্ছেনা এমন সময় সমবায়ের মাধ্যমে কিছু মানুষ মিলে একখন্ড জমি কিনে অনায়াসে ফ্ল্যাটের মালিক বনে যাচ্ছেন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সমবায় সমিতি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলছে। বর্তমান দেশে প্রায় দুই লাখের মতো সমবায় সমিতি রয়েছে। এসব সমবায় সমিতি শেয়ার ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে পুঁজি গঠন করে তা বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মমংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। সমবায়ের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি আর্থসামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বতস্ফুর্ততা, অবাধ সদস্যপদ, গনতান্ত্রিক মনোভাব, আন্ত সমবায় সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ অর্থনীতির ভিত গড়ে তোলা সম্ভব। কেবল “আমি” নয় “আমরা” অর্জন করি আত্মনির্ভরতা।
লেখক- চেয়ারম্যান, চাটমোহর উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ
ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর, পাবনা, বাংলাদেশ, মোবা ঃ ০১৭৩৩-১০৯৪০৫, ইমেইল ronjukabir20@gmail.com