সঞ্জু রায়, বগুড়া: বগুড়ায় সরকারি আজিজুল হক কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে শুক্রবার দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের ১৩ জন গুনী শিক্ষাবিদকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে যাদের মাঝে ছিলেন দেশের স্বনামধন্য ১২ জন অধ্যাপক।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো: জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে সংবর্ধনাপ্রাপ্ত গুণীজন শিক্ষাবিদদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহজাহান আলী। এ সময় অধ্যক্ষ বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষক তিনি যিনি তার ছাত্রকে সন্তানের মতো ভালবাসে এবং বন্ধুসুলভ আচরণে তার ভিতরে লুকায়িত মেধাকে বিকশিত করতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, আদর্শ শিক্ষকের কোন অবসর নেই। কর্মজীবন শেষেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষাঙ্গণে ইতিবাচক পরিবর্তনে প্রতিটি শিক্ষক ভূমিকা রেখে চলেছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধানগণসহ দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য অধ্যাপকবৃন্দদের সংবর্ধনা প্রদানের যে আয়োজন এইবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা সকল প্রতিষ্ঠানে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে এবং নতুনদের অনুপ্রাণিত করবে প্রতিবন্ধকতা কে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রায়। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনামিকা পাল এবং সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল কাদের এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহতাব হোসেন মন্ডল।
কর্মজীবনের নানা স্মৃতিচারণ এবং নিজেদের জীবনের নানা বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, কর্মজীবন শেষেও তাদের অত্র কলেজে ডেকে এনে যেভাবে গুণী শিক্ষাবিদ হিসেবে সংবর্ধনা প্রদান করা হলো তা সত্যিই তাদের বিশাল প্রাপ্তির জায়গা। তিনি আবেগাপ্লুতভাবে আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও অত্র বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তার বক্তব্যে বলেন, শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের পাঠদানই একজন শিক্ষকের দায়িত্ব না। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার চর্চার প্রতিও বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের গুরুত্ব দিতে হবে যে নৈতিকতার চর্চা তারা তাদের কর্মজীবনে করে এসেছেন।
অনুষ্ঠান স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্টার অধ্যাপক আব্দুস সালাম স্মৃতিবিজরিত কণ্ঠে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে তারা যখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করেছিলেন তখনও অনেক শিক্ষার্থী বইয়ের পাতার মাঝে যুদ্ধের রক্ত দেখতে পেতো। তারা ঠিকভাবে খেতে পারত না কারণ ভাতের মাঝেও তারা যুদ্ধের ক্ষত বিক্ষত লাশের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতো। সেই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে জয় করে তারা শিক্ষার আলো ছড়ানোর কাজ করেছেন। সেই দিনের তুলনায় আজ বর্তমান সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে হাজারো সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে যা যদি একজন শিক্ষক কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ে দিতে পারে তবেই সকলের স্বার্থকতা।
সরকারি আজিজুল হক কলেজে এই প্রথম পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে বিভাগের সাবেক শিক্ষক হিসেবে গুণীজন শিক্ষাবিদ সংবর্ধনাপ্রাপ্তরা হলেন, ১২ জন অধ্যাপক যথাক্রমে আব্দুল হাই চৌধুরী, মোজাম্মেল হক, আব্দুস সালাম, আহমদ আলী, আব্দুল খালেক, আবেদা খাতুন, সায়মা কানিজ, মোর্শেদা বেগম, ফজলুর রহমান সাকিদার, আতাউর রহমান, মোফাফফর আলী ও নাসিমা আকতার জাহান এবং ১ জন প্রদর্শক ইউনুস আলী আকন্দ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত এই গুনীজনেরা দিনব্যাপী এই আয়োজনে খুঁজে নিয়েছিলেন নিজের অতীত কর্মজীবনের নানা সুন্দর স্মৃতিগুলোকে। শুধু তাই নয় নিজেদের বাস্তব জীবনের নানা শিক্ষার অভিজ্ঞতা অনুষ্ঠানে তারা ভাগ করে নিয়েছিল নতুনদের সাথে যা হয়তো অতীত ও বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষকদের বিশাল এক সেতুবন্ধনের নির্দশন হিসেবেই অমর হয়ে থাকবে। দিনব্যাপী প্রাণবন্ত এই আয়োজনে অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর মুর্শেদ সিদ্দিকী, সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও ইবনে আজিজ, প্রভাষক রাফিকুন নাহার ও কার্তিক চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।