এবাদত আলী
(পুর্ব প্রকাশের পর)
(পাবনার মক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উজ্জল নক্ষত্র, পাবনার সিংহ পুরুষ নামে খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মৃত্যুবরণ করেন ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয় ১৯৯৫ সালের ২৭ ও ২৮ মে তারিখে। যা নি¤েœ হুবহু তুলে ধরা হলো।)।
“সাক্ষাৎকার”
এই দিন ময়লাগাড়ির নিকটে মুসলেম প্রামাণিকের তেমাথায় আরেকটি যুদ্ধ হয়। সেখানে বুলবুল সহ বেশ ক’জন যোদ্ধা শহীদ হয়। পাবনা শহর শত্রুমুক্ত হলে পাবনায় সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান ছিলেন ডি,সি নুরুল কাদের খান। আমি ছিলাম স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান। এসময় ৬ এপ্রিল পাবনার বিশিষ্ট ব্যক্তি আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন পাবনা সদর হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করলে সংগ্রাম কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কর্তৃক তাকে পুর্ণ মর্যাদা সহকারে দাফন করা হয়।
এ সময় উত্তর বঙ্গের প্রবেশ দ্বার নগরবাড়ী ঘাটে সেলিম, কানা মুন্সি ও রকু সহ একটি ইউনিটকে রেখে আমি নগরবাড়ি সিগারেট সহ একটি পরিত্যক্ত জীপ গাড়ি উদ্ধার করে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে সেই টাকা ডি,সি নুরুল কাদের খান সাহেবের নিকট জমা দেই। তখন ফজলুল হক মন্টুও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ১৩ দিন পাবনা শত্রুমুক্ত থাকে।
ঢাকা থেকে পাক বাহিনী নগরবাড়ী ঘাট হয়ে উত্তর বঙ্গে প্রবেশ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর সঙ্গে প্রচন্ড লড়াই করে। ক্যাপ্টেন হুদা সহ অনেকেই স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। পাক বাহিনীর সঙ্গে কোন অবস্থাতেই টিকে থাকা সম্ভব নয় সে কারণে স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী তাদের অবস্থান ছেড়ে প্রথমে নাটুয়াবাড়ি তারপর আতাইকুলা এবং সবশেষে পাবনা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ১০ এপ্রিল রাতের বেলায় পাক হানাদার বাহিনী পাবনা শহর দখল করে নিয়ে ভেরী লাইট জ্বালায় ও টেসারগান ফায়ার করতে থাকে। এই দিন সুযোগ বুঝে দিনের বেলা টিপু বিশ্বস সহ নকশালেরা পাবনা শহরের একটি ব্যাংক লুট করে। এ সময়ের পর যে যার মত ভারতে যাওয়া শুরু হলো। ২জন ৪জন করে ভারতে যাওয়া হতো। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল বলেন, আমরা আব্দুর রাজ্জাক মুকুল, ফজলুল হক মন্টু বাবুল, জিলানী, ইকবাল, জহুরুল ইসলাম বিশু ও সামস সহ বেশ কজন এক সঙ্গে ভারতের উদ্দেশ্যে শিলাইদহ ঘাট পার হয়ে কুষ্টিয়াতে যাই। কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গার এম,পি, রউফ সাহেবের সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাদেরকে কুষ্টিয়া জেলার ডি,সি, সাহেবের কাছে নিয়ে যান। ডি, সি, সাহেব বলে¬ন অবস্থা খুবই খারাপ, সবাই মেহেরপুর চলে যান। আমরা রউফ সাহেবের বাড়ি হতে খাওয়া দাওয়া করে মেহেরপুর গিয়ে পাবনার ডি,সি, নুরুল কাদের খান ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রব বগা মিয়ার দেখা পাই। তারা আমাদেরকে ডাক বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখানে রিদ্দিক গিয়ে হাজির হয় এবং রকুও ছিল।
এরপর খেতাই বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করা হলে বি,এস,এফ, আমাদের অস্ত্রগুলো রেখে দেয়। শিকারপুর ক্যাম্পে গিয়ে কুষ্টিয়া ভেড়ামারার এম,পি, রাজা মিয়ার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাত হয়। সেখান থেকে আমরা কৃষ্ণ নগর যাই। কৃষ্ণ নগরের বাস মালিকেরা আমাদেরকে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেন।
কৃষ্ণনগরের মটর মালিকেরা একটি চিঠি লিখে আমাদেরকে শিয়ালদহ পাঠালে শিয়ালদহ মটর মালিকগণ আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পাশেই ছিল এম,পি, হোষ্টেল। সেখানে শাহজাহান সিরাজের সঙ্গে দেখা হয়। এর পর প্রিন্সেস স্ট্রিটে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতার বিখ্যাত ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের বাসার পাশে একতলা বিল্ডিং এ আমরা থাকতাম। সেখানের খাদ্য ছিল অধিকাংশ সময়ই আলু সিদ্ধ, আলু ভাজি কিংবা আলুর ঝোল। আমরা সকালে খেয়ে বের হতাম সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম। রাতে ফিরে সকলে বুদ্ধি করতাম এভাবে থাকা যায় না। আমরা যুদ্ধ করব এবং দেশে যাবো।।
(চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।