এবাদত আলী
(পাবনার মক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উজ্জল নক্ষত্র, পাবনার সিংহ পুরুষ নামে খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মৃত্যুবরণ করেন ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয় ১৯৯৫ সালের ২৭ ও ২৮ মে তারিখে। যা নি¤েœ হুবহু তুলে ধরা হলো।)।
“সাক্ষাৎকার”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা সক্রিয় অংশগ্রহন করে নিজের জীবনকে বাজি রেখে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধে আহত হয়ে যারা এই সমাজে বেঁচে আছেন তাদের কোন মুল্যায়ন আজো করা হয়নি। বলতে লজ্জা হয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনকারি এই পাবনা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত একজনকেও কোন খেতাবে ভুষিত করা হয়নি। দেওয়া হয়নি তেমন কোন সম্মান।
কথাগুলো বলছিলেন পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এম,পি, এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক সিংহ পুরুষ বলে খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল। কথা হচ্ছিল তার পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্ল¬ার দ্বিতল বাড়ীর নীচ তলায় তার ড্রইং রুমে বসে। মাথায় টুপি, মুখে চাপদাড়ি আর এন এস গেঞ্জি গায়ে একটি সোফায় বসে কয়েকজন নেতাকর্মির সঙ্গে আলাপ করছিলেন তিনি। আমার সুহৃদ সাংবাদিক এইচ,কে,এম আবু বকর সিদ্দিককে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় উপস্থিত হই। আমরা পুর্ব পরিচিত হলেও পাবনার মুক্তিযোদ্ধারা কেমন আছেন এই বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি জানতে পেরে তিনি লোকজন বিদায় করে দিলেন। ২৭ মে, ৯৫ইং রাত ৮টা ১৮ মিনিট তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ আরম্ভ হলো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের ভাষ্যমতে নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরা হলো। রফিকুল ইসলাম বকুল বলে¬ন, স্বাধীনতা সংগ্রামে পাবনার ভুমিকার কথা বলতে গেলে একটু পিছনের দিক থেকে আসতে হবে। কারণ দেশের গণ-আন্দোলনের সময় পাবনাতে অপর একটি শক্তির বিরুদ্ধেও একই সাথে আন্দোলন করতে হয়েছে। সেই সংগঠন ছিল ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ।
১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ছাত্ররা শেখ মুজিব কর্তৃক ৬ দফাকে অন্তর্ভুক্ত করে ১১ দফা কর্মসুচির ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে যখন ঝাপিয়ে পড়ে তখন তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র এবং পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি ছিলেন এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের ব্যায়ামাগার সম্পাদক। সারাদেশ জুড়েই চলছিল ছাত্র আন্দোলন। এই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে সুজানগর ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায় এবং আব্দুস সাত্তার নামক একজন ছাত্র নিহত হয়। এরই প্রতিবাদে পাবনার ছাত্রগণের পক্ষ থেকে বিরাট মিছিল বের করে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
ঐ দিন এডওয়ার্ড কলেজ মাঠের পুর্বদিকে নবনির্মিত ছাত্র মিলনায়তনের নাম আব্দুস সাত্তার মিলনায়তন রাখা হয় এবং তারই নেতৃত্বে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তা অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় অপর একটি ছাত্র সংগঠন ছিল যা নাকি ন্যাপের অংগ সংগঠন যার নেতৃত্বে ছিলেন আমিনুল হক (টিপু বিশ্বাস), আব্দুল বারি সরদার, নাজমুল হক নান্নু, আখতারুজ্জামান বাদশা প্রমুখ। এই সংগঠনের শ্লোগান ছিল জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও ইত্যাদি ইত্যাদি। এদিকে ছাত্রলীগের সমর্থক ও নেতাদের মাঝে যারা ছিলেন তারা হলেন সোহরাব উদ্দিন সোবা, আব্দুল মান্নান গোরা, রবিউল, রেজাকাদের খান, রেজাউল করিম, আহম্মেদ রফিক, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুস সাত্তার লালু, জহুরুল ইসলাম বিশু, আমিনুল ইসলাম মুক্তা, এবাদত আলী, মাসুম আহমেদ প্রমুখ। তখন পাবনাতে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে চরম দ্বন্দ চলতে থাকে। উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষও ঘটে। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।