এবাদত আলী
(পাবনার মক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উজ্জল নক্ষত্র, পাবনার সিংহ পুরুষ নামে খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মৃত্যুবরণ করেন ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয় ১৯৯৫ সালের ২৭ মে তারিখে। যা নি¤েœ হুবহু তুলে ধরা হলো।)।
“সংক্ষিপ্ত জীবনী”
রফিকুল ইসলাম বকুল, পিতা নজিবর রহমান, মাতা রাবেয়া খাতুন। দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার চিথুলিয়া গ্রামে। ১৯৪৯ সালের ২৯ জুন পাবনা শহরের দিলালপুরে তাঁর নানা মৌলভী কাজেম উদ্দিন মোখতারের বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে পবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। কলেজ জীবনে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ব্যায়ামাগার সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
‘৭৪ সালে শহীদ বুলবুল মহাবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রিলাভ করেন। ১৯৭১ এ মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৯৭১এর ২৩শে মার্চ পাবনা টাউন হল ময়দানে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলণ করেন। ১৯৭২ সালে পাবনা জেলা শ্রমীক লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে পাবনা জেলা কৃষকলীগ গঠনে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কৃষকলীগ গঠন ও কৃষকদের সুসংগঠিত করেন। ১৯৭৩ সালে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে ৭৮ সাল পর্যন্ত সেই পদে আসিন ছিলেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর প্রায় বিশ হাজার অনুসারি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ ও ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থি হিসাবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জেলা বিএনপির আহবায়ক এবং পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব পান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে জাতীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ ৩ দশকের পাবনার রাজনীতিতে জনাব বকুলের উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল। একজন দক্ষ সংগঠক, নেতা, কখনও মাঠ পর্যায়ের কর্মি। তিনি নিজেই নিজেকে পাবনার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাড় করাতে সক্ষম হন। যে কারনে অধিকাংশ নেতা কর্মিই তাঁকে ‘গুরু’ বলে সম্বোধন করত। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসি কর্মকান্ড বৃহত্তর পাবনা জেলার আপামর মানুষের কাছে কিংবদন্তির মর্যাদা এনে দেয়। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ পাবনা টাউন হল ময়দানে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গোড়ে তোলেন সশস্ত্র প্রতিরোধ। যোগ্যতার বলে পাবনা-সিরাজগঞ্জের মুক্তি বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে পবনা শহরের রাধানগর মহল্ল¬ার বাসিন্দা রাজস্ব প্রশাসনের ভুমি সহকারি কর্মকর্তা আবু তাহের আনসারীর কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম নাসিমা ইসলাম। ব্যাক্তি জীবনে তিনি ১পুত্র ও ১ কন্যার জনক। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বিকালে ঢাকা থেকে বাসযোগে পাবনা আসার পথে সিরাজগঞ্জের কোনাবাড়ি নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় এই বীর যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।