সঞ্জু রায়, বগুড়া: বগুড়ার সোনাতলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদা পারভীনের স্বামীকে মারধরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে শামিম হোসেন (৩৫) কে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুমিন হাসান এ নির্দেশ দেন৷
এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে ইউএনওর গাড়ি চালক ফেরদৌস হোসেন বাদী হয়ে সোনাতলা থানায় মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন৷
ওই মামলায় সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সোনাতলা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বুলুর ছেলে শামিম হোসেনকে একমাত্র আসামি করা হয়। এছাড়াও এ ঘটনায় আটক থাকা শামিমের ছেলে কিশোর হওয়ায় ও তার বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ না আনায় রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মর্মে জানা যায় ।
জানা যায়, গত শনিবার (২৯ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনের সামনে সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে মারধরের এই ঘটনা ঘটে।
বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন, সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈকত হাসান।
মামলার এজাহারে বরাত দিয়ে ওসি জানান, মারধরের শিকার ব্যক্তির নাম আল আমিন শিকদার। তিনি পেশায় সফটওয়্যার ডেভেলপার। ভুক্তভোগী সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদা পারভীনের স্বামী। সোনাতলা উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টার এলাকায় ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট আছে। সেখানে অনেকেই ব্যাডমিন্টন খেলে। উপজেলা পরিষদের চত্বরে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনের সামনে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে ইউএনও সাইদা পারভীনের স্বামী আল আমিন খেলার জন্য যান। এ সময় সেখানে আগে থেকে শামিম হোসেন ও তার ছেলে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন।
ইউএনওর গাড়িচালক খেলার কোর্টে গিয়ে তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু শামিম ক্ষিপ্ত হয়ে কটু কথা বলেন ওই চালককে। এতে শামিমের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন ওই গাড়ি চালক। এ সময় ইউএনওর স্বামী তাদের ঝগড়া করতে নিষেধ করলে তার বুকে লাথি মারেন শামিম। পরে লাঠি নিয়ে আল আমিনের ওপর হামলা চালানো হয়।
শামিমের বাবা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহাবুব আলাম বুলু মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার দাবি, ইউএনওর স্বামীকে তার ছেলে মারধর করেনি। একটু ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে।
মাহবুব আলম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বামী তো অপরিচিত মানুষ। কিন্তু তার ছেলে-নাতিকে সবাই চেনেন। সন্ধ্যার আগে দিয়ে ইউএনওর বাসভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার ছেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ইউএনওর স্বামী উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় ধাক্কাধাক্কি হয়েছে এর বেশি কিছু হয়নি।
সার্বিক প্রসঙ্গে সোনাতলার ইউএনও সাইদা পারভীন জানান, সন্ধ্যার দিকে খেলার মাঠে কোনো কারণ ছাড়াই শামিম তার স্বামী আল আমিনের ওপর হামলা করেন। সম্প্রতি ভারত থেকে তার স্বামীর হার্টে অপারেশন করা হয়েছে। বুকের হাড়ে স্ক্রু বসানো আছে। এই ঘটনায় তার স্বামীর বুকের স্ক্রু ডিসপ্লেস হয়েছে। তিনি এখনও অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার বাহিরে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সোনাতলার ইউএনও সাইদা পারভীনের স্বামী আল আমনিকে মারধরের ঘটনার পর তিন আনসার সদস্যকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তারা হলেন, জামিরুল ইসলাম, ইমারত আলী ও মোখলেসুর রহমান। বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন, বগুড়া আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট শেখ ফিরোজ আহমেদ। এই কর্মকর্তা জানান, সোনাতলা উপজেলা আনসার কর্মকর্তার সুপারিশে আরো অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনে নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবে তাদের অন্য সংস্থায় বদলি করা হয়েছে।