সঞ্জু রায়, বগুড়া: বগুড়ায় অপহৃত দুই তরুণ-তরুণীকে উদ্ধারে নেমে দীর্ঘসময় ধরে গোপনে সংঘবদ্ধ হয়ে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মাত্র ২ ঘন্টার অভিযানে সোমবার অপহরণ হওয়া ২৪ বছর বয়সী আকাশ হোসেন ও সুমাইয়া আক্তার নামে এক নারীকে উদ্ধারপূর্বক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতারও করেছে র্যাব-১২ এর আভিযানিক দল।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন, নারুলী এলাকার চান্দু মিয়ার ছেলে শাকিল হোসেন (২৪), নুর আলমের ছেলে জুয়েল রানা (২৫) ও মৃত মোকলেছারের ছেলে সাকিব হোসেন (২২)।
মঙ্গলবার সকালে র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার (স্কোয়াড্রন লিডার) তৌহিদুল মবিন খান সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারের তথ্যটি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার তিনজনসহ উঠতি বয়সের প্রায় ৮ জন তরুণ মিলে বগুড়ায় একটি অপহরণকারী চক্র গড়ে তোলেন। প্রায় তিন বছর যাবত তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষদের সুযোগ বুঝে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করতো। সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে আকাশ হোসেন ও সুমাইয়া আক্তার পূর্ব পরিচিত হওয়ার সুবাদে শহরের মাটিডালি বিমান মোড়ে দেখা করতে যান।
এসময় গ্রেপ্তার তিন অপহরণকারী তাদের সহযোগীদের নিয়ে আকাশ ও সুমাইয়াকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে শহরে নারুলী আকাশতারার রেল লাইন এলাকায় নিয়ে যায়।
অপহরণকারীরা সেখানে অপহৃতদের নিজ নিজ মুঠোফোন থেকে পরিবারের কাছে ফোনে করে মুক্তিপণ দাবি করে। দাবীকৃত মুক্তিপণ না পেলে তাদের হত্যার হুমকিও দেয় তারা। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে সুমাইয়ার পরিবারের থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা আদায় করে নেয় সেই চক্র ।
এসময় আকাশের স্ত্রী বগুড়া সদর থানায় জিডি করার পরে বিষয়টি বগুড়া র্যাবকে অবহিত করে। এরপরে মাত্র দুই ঘণ্টার মাথায় র্যাব-১২ বগুড়ার আভিযানিক দল প্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃতদের অবস্থান নিশ্চিত করে অভিযানে নামে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে নারুলী আকশাতারা এলাকার একটি ধানের জমি থেকে আকাশ কে ও তার পাশের একটি এলাকা থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধার করা হয়। এসময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তিন অপহরণকারী ধরা পড়ে যায়। তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ জন অপহরণকারী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার আরও জানান, অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়া অপহরণকারীদের মধ্যে রাহুল, ইমেন ও হাছান নামের তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৪ থেকে ৫ জনকে শনাক্তসহ সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার শাকিলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। প্রায় ১১ মাস জেলহাজতে থাকার পরে সম্প্রতি তিনি জামিনে যুক্তি পান। এরপর আবারও শাকিল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। র্যাব-১২ বগুড়ার এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তাররাসহ শনাক্ত হওয়া ৩ জন ও অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।