ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর (পাবনা)
শীতের পূর্বাভাস নিয়ে আসল ছয় ঋতুর চতুর্থ ঋতু হেমন্ত। কার্তিক ও অগ্রহায়ন মাস নিয়ে গঠিত এ ঋতুটি নানা কারণে আমাদের মনকে করে আন্দোলিত। নবান্ন উৎসব এ ঋতুতে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।
কার্তিকের পরিপক্ক ধান অগ্রহায়নে কাটা হয়। তাই ধান কাটার ঋতু হেমন্ত। ফসল ঘরে তোলার ঋতু হেমন্ত। আমন ধান কাটার পর বাড়িতে বাড়িতে নতুন ধানের চালের পিঠা পায়েস তৈরীর ধুম পরে এ ঋতুতে। শ^শুর বাড়ির কাজ শেষে মেয়েরা জামাইসহ আসে “নাইওরে”। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে হেমন্ত ঋতু প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও এখনো এ ঋতুতে দেশীয় নৃত্য, গান বাজনা, বাঙালীপনায় মাতে গ্রামের মানুষ।
এ ঋতুতে কেবল কৃষক নয় কৃষি সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা কাজের সুযোগ পান। বিনিময়ে আহার জোটে তাদেরও। চাকা নির্ভর এক শ্রেণীর মানুষ গরু, মহিষ, ঘোড়ার গাড়িতে, লসিমন, করিমন, ভ্যান যোগে মাঠ থেকে কৃষকের ধান বয়ে বাড়িতে পৌছে দেবার কাজ করেন। তারা ও অপেক্ষায় থাকেন হেমন্ত আসার। এ কাজ করে তারাও আয় করেন অর্থ। শুধু তাই নয় ধান কুড়াণীরা হেমন্তকে বরণ করে সাদরে। কেননা, এসময় মাঠে মাঠে ধান কুড়িয়ে তারা ব্যবস্থা করেন কয়েক মাসের অন্নের।
কামিনী, শিউলী, ছাতিম, মল্লিকা,গন্ধরাজসহ হরেক রকম ফুল এ ঋতুতে ফুটে থাকে। সুফিয়া কামাল তার হেমন্ত কবিতায় লিখেছেন, সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাাঁদা চিঠি লেখে/ কোন্ পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে। আবার হেমন্তকে নিয়ে রবি ঠাকুরের লেখা হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে, হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে। ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো ‘দীপালিকায় জ¦ালাও আলো, জ¦ালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোর ধরিত্রীরে’। এ ছাড়া আরো অনেক কবি সাহিত্যিকেরা হেমন্তের শান্ত প্রকৃতিকে, হেমন্তের ফুল ফল ফসলকে যে ভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন তাতে হেমন্তকে মনে রাখতেই হয়।