ইয়ানূর রহমান : আগামীকাল সোমবার যশোরে জেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। এবারের
নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট গ্রহণ করা হবে ইভিএমে। আনুষ্ঠানিকভাবে
শনিবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হলেও বসে নেই প্রার্থী ও তাদের
সমর্থক-অনুসারীরা। তারা ভোটারদের বাড়ি ও অফিসে গিয়ে শেষ মুহূর্তের
প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে কয়েকজন প্রার্থী গত দু’দিন টাকার থলে
নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন অনেকে। তারা জয়ী হতে টাকা
ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে টাকা লেনদেন বিষয়ে কেউ নির্বাচন কমিশনে
অভিযোগ করেননি।
যশোর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলা পরিষদের নির্বাচনে
চেয়ারম্যানের একটি, ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত (মহিলা) ওয়ার্ড
সহ মোট ১২টি পদে সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ
অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দু’জনসহ মোট ৫১ প্রার্থী
ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। জেলার মোট ৮টি উপজেলার ১৬টি ভোট কেন্দ্রে এক হাজার
৩১৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ জন্য আটজন প্রিজাইডিং
অফিসার, ১৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৩২ জন পোলিং অফিসার, ৫৬ জন ভোট
গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। যশোর সদর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত
হবে শহরের এমএম আলী রোডের কালেক্টরেট স্কুলে। এ দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর
২টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত সাইফুজ্জামান পিকুল ঘোড়া
প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেঠেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিকল্পধারার
পরিচয়ধারী আনারস প্রতীকের মারুফ হোসেন কাজল। তারা দু’জনই জয়ের ব্যাপারে
আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে ভোটাররা ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বর অধিকাংশই
আওয়ামী লীগের ঘরানার হওয়ায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে কাজলের জন্য
চ্যালেঞ্জ বলে অনেকে মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক
সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, প্রতিটি ভোটারের কাছে গিয়ে তিনি ঘোড়া প্রতিকের
ভোট প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ চাইলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত
করেছেন।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী বিকল্পধারার নেতা আনারস প্রতীকের মারুফ হাসান
কাজল বলেন, আল্লাহর রহমতে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, ভালো ফলাফল হবে
বলে তিনি আশা করেন।
এক নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন শার্শা উপজেলা আওয়ামী
লীগের সহ-সভাপতি সালেহ আহমেদ মিন্টু ও সহিদুল আলম।
দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করছেন ইমামুল হাবিব, রফিকুল
ইসলাম বাপ্পী, ইকবাল আহমেদ ও সুরত আলী। এখানে এক প্রার্থী প্রভাব বিস্তার
করার চেষ্টা করছেন বলে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া
হয়েছে।
তিন নম্বর ওয়ার্ড চৌগাছা থেকে প্রার্থী হয়েছেন দেওয়ান তৌহিদুর রহমান,
কামরুজ্জামান, আসাদুল ইসলাম ও আহসান হাবীব।
চার নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য প্রার্থী প্রদীপ দে, আব্দুর রউফ মোল্লা,
জিএম মনিরুজ্জামান, শেখ মাহবুব উর রহমান, ফারাজী আশিকুল ইসলাম বাঁধন ও
এমএম আজিম উদ্দিন।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ইউনুছ আলী, এনায়েত হোসেন
লিটন ও রাকিব হাসান ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।
ছয় নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন শ্রমিকলীগ নেতা জবেদ আলী, শেখ
ইমামুল কবির, রাকিবুল আলম রাকিব, সোহেল রানা, শেখ আব্দুল মতলেব ও
ওয়াহেদুজ্জামান সেলিম। অভিযোগ রয়েছে এ ওয়ার্ডে টাকার খেলা চলছে। এ নিয়ে
শহরে নানা গুঞ্জনও রয়েছে।
সাত নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী ও শহিদুল ইসলাম মিলন।
এরমধ্যে গৌতম চক্রবর্তী প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ভাগ্নে।
অন্যজন মিলন গেলবার জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
সবচেয়ে বেশি প্রার্থী আট নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে সোহরাব হোসেন, এসএম মহব্বত
হোসেন, সাঈদুর রহমান, মাসুদুজ্জামান, আজিজুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন বিশ্বাস
ও নজরুল ইসলাম খান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এদিকে, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ১ নম্বর থেকে রেহেনা খাতুন, হাজেরা পারভীন,
রাখী ব্যানার্জী, লায়লা খাতুন, নাছিমা সুলতানা মহুয়া, সান-ই-শাকিলা
আফরোজ, মরিয়াম বেগম ও বিলকিস সুলতানা সাথীসহ মোট আটজন ভোট যুদ্ধে
নেমেছেন।
সংরক্ষিত দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাসরিন সুলতানা, রুকসানা ইয়াসমীন পান্না
ও নাদিরা বেগম এবং তিন নম্বর ওয়ার্ডে সাহানা আক্তার, নাসিম আরা চৌধুরী ও
শায়লা জেসমিন নির্বাচন করছেন।
এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আনিছুর
রহমান বলেন, ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে
সিসি ক্যামেরা বসানো ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে
সব কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ভোটের মাঠে টাকা
ছড়ানো ও ভোট কেনার বিষয়ে তার দফতরে কেউ অভিযোগ করেননি। এ কারণে বিষয়টি
তাদের জানা নেই।#