ওসমান গনি, বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ
পাবনার বেড়া উপজেলায় লাম্পি চর্মরোগ (এলএসডি) আক্রান্ত হচ্ছে খামারিদের গরু, এতে নিজেদের গবাদি পশু নিয়ে আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
সরেজমিনে গরুর মালিক,খামারি এবং বেসরকারি পশু চিকিৎসকদের অভিযোগ লাম্পি স্কিন রোগে গবাদিপশু মৃত্যু এবং আক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা এবং খোঁজ খবর নিতে দেখা যায়নি,অথচ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দাবি,লাম্পি স্কিন রোগ সম্পর্কে নয়টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে লাম্পি স্কিন রোগ প্রতিরোধ সম্পর্ক উঠান বৈঠক,লিফলেট বিতরণ সহ বিভিন্ন ধরনের সেবা মূলক কাজ এখনও চলমান রয়েছে। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশত গবাদিপশু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত বেসরকারি পশু চিকিৎসক ও স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।তন্মধ্যে উপজেলার বড়শিলা গ্রামে ৪টি, কৈটোলা গ্রামে ২টি, নয়ানপুর ১টি, নাকালিয়া ২টি, চাকলা ৬ টি ,চর নাকালিয়া ২টি, চর সাঁড়াশিয়া ৪টি। খামারিরা আরও জানান, ছোট সাইজের গরু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
গবাদি পশু লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পশুর গরুর মালিক ও খামারিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েন। সরকারি ভাবে বর্তমান এর ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। তবে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি এ লাম্পি স্কিন ভ্যাকসিন বাজারজাত করছে। একটি ভ্যাকসিনে প্রায় ২৫শ টাকার মতো খরচ হয়। তাই অনেক গবাদিপশু মালিক বা খামারিরা অনেক সময় পশুকে ভ্যাকসিন প্রয়োগে অনীহা প্রকাশ করে। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে মাত্র আড়াইশো টাকায় বাজারে অহরহ লাম্পি স্কিন ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। অনেক গরুর মালিক ও খামারিরা গাফিলতি করে স্বল্প মূল্যের ভ্যাকসিন বাজার থেকে ক্রয় করে না। তবে সময় মতো ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা দিলে এ রোগে আক্রান্ত গবাদি পশু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলে জানান বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মিজানুর রহমান। এ কর্মকর্তার মতে , বেড়া উপজেলায় এ রোগে আক্রান্ত পশুর সংখ্যা এখন দেড় থেকে দুইশো। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , ধারণা করা হয় গবাদিপশুদের মধ্যে লাম্পি চর্মরোগের ভাইরাস ক্যাপিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এটি দূষিত খাদ্য , পানি , আইট্রোজেনিক ও সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে প্রাণিদের মধ্যে সংক্রমনিত হয়।এ ধরণের ভাইরাস মানবদেহে রোগ ছড়ায় না। সহজভাবে বললে এটা একটি ভাইরাস ডিজিস, অ্যালার্জি জাতীয় রোগ, মশা – মাছি , খাদ্য , পানীয় ও সরাসরি সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগে গবাদিপশু দূর্বল হয়ে পড়ায় সহজে অন্য রোগেও আক্রান্ত হয়।তিনি আরও জানান লাম্পি রোগে আক্রান্ত হলে দুধেল গাভীর দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়। এছাড়া দুধে এ ভাইরাস থাকায় আক্রান্ত গাভীর দুধ খেলে বাছুরও আক্রান্ত হতে পারে। তাই আক্রান্ত গাভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে মাটিতে গর্ত করে মাটিচাপা দিতে হবে। এ রোগ থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করতে হলে পরিস্কার – পরিচ্ছন্নাতার দিকে সবসময় নজর রাখতে হবে। গবাদিপশু রাখা এবং থাকার জায়গা পরিস্কার এবং মশা – মাছির হাত থেকে রক্ষা এবং আক্রান্ত গরুকে আলাদা ভাবে রেখে পরিচর্যা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রোগটি প্রধানত বর্ষার শেষ দিকে বিস্তার লাভ করে এবং ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী অ্যাল্টিপাইরেটি, অ্যাল্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত না হলে এ জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করলে ২১ দিন পর থেকে সাধারণত আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে থাকে।
