নাটোরে থেমে নেই অবৈধভাবে মাটি কাটার মহা উৎসব । অভিযোগ উঠেছে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। গ্রামীণ সড়কগুলোতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে মাটি বোঝাই ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক । মাটি উত্তোলন করে ড্রাম ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ও শহরের সড়ক। ১০ চাকার ট্রাম ট্রাকের কারনে ভাঙছে পাকা রাস্তা। এতে রাস্তা ভাঙা সহ পথচারীদের বিভিন্ন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন।এ সমস্ত ড্রাম ট্রাক ঝড়ে বেগে চলাচলের কারণে তাদের অন্ধকার করে দেওয়া বালি ঝড়ে ও ধূলাবালির কারণে সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হয়। মাটি ব্যবসায়ী ও বালু বহনকারী ড্রাম ট্রাকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়দের প্রতিবাদ করার সাহস নেই।যার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে যাতায়াতকারী মানুষের বহুকাঙ্খিত সেতু ও ফসলি জমি। ১০ চাকার ট্রাম ট্রাকের কারনে ভাঙছে পাকা রাস্তা।একইসাথে বাড়িঘর ভাঙনের দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন রাস্তার দুইধারের বহু পরিবার।
নাটোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্র মতে, নাটোর সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে বৈধ-অবৈধ প্রায় ৫০ টি ইটভাটা রয়েছে। এসব রাস্তা দিয়ে মাটি বোঝাই ইটভাটায় চলাচল করে ভারি যানবাহন। এসব মাটি বহনকারি ১০ চাকার, ৬ চাকার ভারী ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ টনের মতো ওজন থাকে অথচ এসব রাস্তার ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১৭ টন। মাটি আনা নেয়ার জন্য ভারি যানবাহন চলাচলের আলাদা রাস্তা রয়েছে। কিন্তু চালকরা ভারি ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো ইউনিয়নের বিভিন্ন
স্থান থেকে অতিরিক্ত বোঝাই নিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল উপযোগী রাস্তা দিয়ে চলাফেরা না করে রাস্তার দূরত্ব কমানোর জন্য কম ওজন ধারণকারী গ্রামের রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচল করে। তাতে রাস্তাগুলো খুবই তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাতের আঁধারে অবাধে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। এসব মাটি বড় ও ছোট ড্রাম ট্রাক যোগে বিভিন্নস্থানে বিক্রি করা হচ্ছে, যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনার কাজে।
যদিও মাটি ব্যবসায়ীদের দাবি তারা এলাকার উন্নয়নের কাজের জন্য এসব মাটি বিক্রি করছেন। আর এভাবেই তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, মাটি কাটার সাথে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কিছু বলতে গেলেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারেননি ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারের সদস্যরা।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন, মহা-সড়কের জন্য চলাচলের অনুমোদন প্রাপ্ত ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক ।কিন্তু এই ড্রাম ট্রাক গ্রামের কাচা বা পাকা রাস্তায় চলাচলের কোন অনুমতি নাই। সরকারী নিয়ম ভঙ্গ করে ড্রাম ট্রাকে বহন করে রাস্তায় চলাচল করছেন প্রতিদিন। এজন্য রাস্তার অনেক অংশে ভেঙ্গে ও দেবে যাচ্ছে। যেখানে ছোট ছোট মাটিবাহী যানবাহন এই রাস্তার জন্য অনুপোযোগী, কিন্তু সে রাস্তায় পরিবহনে স্থানীয় মাস্তানদের ম্যানেজ করে ১০ চাকার ট্রাম ট্রাক চালাচ্ছেন।
অনেকেই আবার দলীয় পদ বলে এসব ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে ফসলি জমির মাটি অন্যত্র বিক্রি করছে একটি চক্র। ফলে ফসলি জমি নষ্টের পাশাপাশি আবাদ করতে না পারায় ওই এলাকার খেটে খাওয়া কৃষকরা অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাঙ্গাঙ্গীর আলম বলেন, মাটি কাটার জন্য কাউকেই অনুমতি দেয়া হয়নি। ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যদি কেউ অবৈধভাবে মাটি কাটে এবং গাড়ি চালায় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো। মাটি কাটা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এলাকাবাসীরা জানান, কিছুদিন পূর্বে ১০ চাকার ট্রাম ট্রাক দিয়ে পিচের রাস্তার উপর দিয়ে উপজেলা প্রশাসন বন্ধ করে দিলেও আবারো অজ্ঞাত কারনে সেই গাড়ি গুলো অবাধে আবারো চলাচল করছে। ফলে রাস্তা ভেঙে মাটির সাথে লেপটে যাচ্ছে। বেড়েছে সড়ক দূঘর্টনা। বাধা দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের হুমকির শিকার হচ্ছে নিরীহ গ্রামবাসী। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা
করে ওই রাস্তায় ১০ চাকার ট্রাম ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।