নাজিম হাসান, রাজশাহী থেকে:
গ্রামবাংলার কৃষিযন্ত্র জাঁত এক সময় গ্রামের কৃষকদের সেঁচের প্রধান যন্ত্র ছিল, এসময় এসে আধুনিকতার দাপটে তা আজ জাঁত বিলুপ্তির পথে বসেছে। জাঁত দিয়ে ধানী জমি পানি দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছে কৃষকরা। অঞ্চল ভেদে যার বিভিন্ন নাম থাকলেও রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কৃষকরা একে জাঁত বলে চেনেন। এককালে এই জাতের ব্যবহার ছিল উপজেলাজুড়ে কৃষকের ঘরে ঘরে। এখন জাঁত চলে গেছে যাদুঘরে। কৃষক হয়ে পড়েছে যন্ত্র নির্ভর। মেশিন ষ্টাট দিলে অথবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করলেই ওঠছে পানি। শুধু পানি তোলাই নয় । আধুনিক কৃষি কাজের ষাট সত্তর ভাগ হচ্ছে এখন যন্ত্র দিয়ে । যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষক হয়ে পড়েছে আরাম প্রিয়। তারপরও মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে কৃষি কাজে ব্যবহায্য আদি যন্ত্রপাতির। কৃষিকাজে আদি দেশীয় এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারী কৃষকরা জানান, অভাবের কারণে নয় শখের বসে এবং আদি ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যই তারা এসব যন্ত্রের ব্যবহার এখনও চালু রেখেছেন। উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের মাধনাগর গ্রামের এমনি এক কৃষক জাফর আলী। বাড়ি সংলগ্ন একটি খালে তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তার জমি সংলগ্ন রয়েছে একটি ছোট ডারা( জলাশয়)। সেখান থেকে তিনি অনয়াসেই ওই জমিতে একটি ছোট শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিয়ে বোরোর আবাদ করতে পারেন। তারপরও শখের বসে ওই ডারা(জলাশয়) থেকে জাঁত দিয়ে পানি তুলে বোরোর জমিতে সেচ দিয়ে যাচ্ছেন। তার দেখাদেখি আশপাশের আরো কয়েকজন কৃষক ওই একি পদ্ধতিতে বোরোর জমিতে সেচ দেওয়া শুরু করেছেন। কৃষকরা জানান, জমি চাষ ও চারা রোপন সব কিছুই তারা শ্রমিক দিয়ে করেছেন। এখন সেচের কাজটি তারা মেশিন দিয়ে না করে নিজেরাই জাঁতের ব্যবহার করছেন। তাদের মতে, জাঁত দিয়ে অতি দ্রুত সেচ দেওয়া যায়। এতে তাদের এক প্রকার ব্যায়াম হচ্ছে। আগে তারা প্রচুর কায়িক পরিশ্রম করত। সেই তুলনায় এখন তাদের পরিশ্রম অনেক কমে গেছে। এভাবে তারা অলস সময় কাটিয়ে ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার সহ নানান রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মূলত কায়িক শ্রম বাড়াতে ও কাজের মধ্যে থাকতেই তারা বোরোর জমিতে সেচের জন্য জাঁতের ব্যবহার ধরে রেখেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান জানান, বাংলার কৃষির আদি ঐতিহ্য অনেক কৃষক এখনও শখের বসে ধরে রেখেছেন। আমাদের নতৃন প্রজন্মের কাছে এসব আদি যন্ত্র একটি শিক্ষনীয় বিষয়। শখের বসে এসব আদি যন্ত্রের ব্যবহার কৃষিতে কৃষকের আগ্রহ ও ভালবাসার বহি:প্রকাশ। শুধু এসব আদি যন্ত্রপাতি নয় কৃষক এখন বিষমুক্ত বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে বিভিন্ন দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। যা মানব স্বাস্থ্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য অপরিহার্য।