নাটোরের নলডাঙ্গায় গান লোডের আড়ালে চলছে পর্ণ ভিডিও বিক্রির ব্যবসা

নাটোর প্রতিনিধি
শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম। এখন সব খানেই গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গান লোডের আড়ালে চলছে পর্ণ ভিডিও বিক্রির ব্যবসা। ১০ থেকে ২০টাকায় মিলছে পর্ণ ভিডিও। বর্তমানে তরুণ ও যুবসমাজের একটি বৃহৎ অংশ, এখন মাদকের নেশার চেয়েও পর্ণ ভিডিও সংরক্ষণ ও দর্শনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এমন অবস্থা জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুর বাজার, হাঁপানিয়া বাজার, বাঁশভাগ, হলিদাখলসি বাজার, মাধনগর বাজার। এসব বাজারেই ক¤িপউটারের দোকানে সহজেই মিলছে পর্ণ ছবি। এসব দোকানে বিভিন্ন সিনেমা, নাটকের নাম করে মেমোরি কার্ড ও পেনড্রাইভে করে সহজে বহন করছে যুব সমাজরা। উঠতি বয়সের ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পর্ণ ভিডিওতে আসক্ত হয়ে পড়ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার পশ্চিম মাধনগর গ্রামের উড়তি বয়সী এক যুবক বলেন, গান লোডের দোকানে এই ব্যবস্যা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এসব ছাড়া দোকানের ব্যবসা চলে না, কেউ লোড দিতে চায় না। ছেলেদের পাশাপাশি কৌশলে মেয়েরাও পর্ণগ্রাফি লোড দেয়।

এসব পর্ণ ছবির ছোবলে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা বিপথগামী হচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ডাউনলোডের অন্ত:রালে বিশেষ ইশারায় এসব পর্ণ ভিডিও মেমোরিতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল।

উপজেলার আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম ফকরুদ্দিন ফুটু বলেন, মহামারির মতো নীল ছবি আমাদের সমাজে ঢুকে পড়েছে। এছাড়া পড়াশোনায় অনেকেই অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে অভিভাবকরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তরুণদের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জেলা ও উপজেলা শহর ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের ছোট-বড় হাট-বাজারে অসংখ্য স্থানে লোডের দোকান গড়ে ওঠেছে। এসব দোকানের অধিকাংশতেই অশ্লীল ভিডিও ও ছবির কালেকশন রয়েছে। দেশের অবৈধ এ পর্ণগ্রাফি ও অশ্লীল ভিডিও চিত্র মোবাইলের মেমোরিতে ধারণ ও বিপনণ ব্যবসা প্রতিহত করার জন্য একটি আইন থাকলেও সরকারের প্রনীত এ আইনের প্রতি বৃদ্ধাক্সগুলি প্রদর্শন করে উপজেলার বিভিন্ন ক¤িপউটারের দোকান ও ষ্টুডিওতে চালানো হচ্ছে অবৈধ অশ্লীল ভিডিও ব্যবসা।

সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ীরা ১টি হার্ডডিস্ক লোডের জন্য ১০০-২০০ টাকা নিয়ে থাকেন। আর সেসব হার্ডডিস্ক প্রতি সপ্তাহে, বিভিন্ন মাধ্যমে পৌঁছে যায় উপজেলার বিভিন্ন দোকানে। পর্ণ ছবি আপলোড করার জন্য একাধিক হার্ডডিস্ক ও পেনড্রাইভে ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। সেখানেই পর্ন ছবি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। আর হার্ডডিস্ক ও পেনড্রাইভ রাখা হয় গোপন স্থানে। এসব পর্ন ছবি লোড করতে দোকানগুলোতে বিশেষ করে, বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর উড়তি বয়সের যুবক ও ছাত্রদের ভিড় লেগেই থাকে।

পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন বলছে, কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে,তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য সর্বেচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

নলডাঙ্গার শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ তোতা বলেন, উপজেলায় যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে ক¤িপউটারের দোকান। যেখানে প্রকাশ্যেই মেমোরি লোডের মাধ্যমে নীল ছবির জমজমাট ব্যবসা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নয়তো দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের তরুন সমাজ।

নলডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষক কল্যান পরিষদের সভাপতি ও মাধনগর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,মো¯াফিজুর রহমান মুকুল বলেন, উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা পর্ণে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং নিয়মিত পর্ণ ছবি ক্রয় করে। ফলশ্র“তিতে দেখা যায় তাদের নৈতিকতার অধঃপতন ঘটে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সহজেই জড়িয়ে পড়ে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত হয়েছি। আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।