রক্তাক্ত মাতৃভাষা

এনামুল হক টগর

পৃথিবীর দিকে দিকে বাংলা বাংলা ধ্বনি
ফেব্রুয়ারি মহা-চৈতন্য ও ৮ই ফাল্গুন ধ্বনি,
আজব বিস্ময় মরমী জীবন প্রেমের ভাষা ক্রন্দন ধ্বনি-
কিন্তু তখনও আমি পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হইনি,
নূর তত্ত্বজ্ঞানে জন্ম আমার গুপ্তধন মনি!
মায়ের পবিত্র রক্তের নিগূঢ় রহস্য মর্মভেদ
জঠড়েই,মহাচৈতন্যের বাণী আসতো হৃদয়ে আলো দিতো আদি!
এক মহা-ইতিহাসের ও বিদগ্ধ ভালোবাসার প্রেম বাক্য ঝলক।
সে ধ্বনির মধুময় সুর আমার কর্ণে চেতনা জাগাতো মহা-ঐক্য!
আমি শরিয়ত ও মারফত তত্ত্বজ্ঞানে
মায়ের পবিত্র জঠরে থেকেই আলোকপ্রাপ্ত হতাম বিশোধন!
মনোযোগ ধ্যানে ও আত্মিক প্রেমে বিভোর
হয়ে তপস্যা করতাম অনাদি জাগরণ দিদারে।
আর এই বাংলার মহা-সৌন্দর্যের ভাষায়
জাতির শ্লোগান শুনতাম মিছিলে চেতনাময়।
কতো কবিতা,কতো গান,কতো গল্প,কতো উপন্যাস ইতিহাস বিস্ময়।
সেই কালের ভেতরেই মহাকালের আহ্বান
ধ্বনি হতো রফিক শফিক সালাম বরকত জব্বার ক্রন্দন,
আরো আরো অনেক ভাষা শহীদদের জীবন অমরত্বে মরণ!
মাতৃপ্রেম রহস্যে আমি তাঁদের সাথে কথা বলতাম গোপনে,
আর বাংলা বাংলা বলে মাকে ডাকতাম আ আ ক খ নিপুণ নয়নে।
তারপর আমি এই প্রিয় মাতৃভূমিতে ভূমিষ্ঠ হলাম প্রতিবাদে,
আমার বিবেকবোধ দুঃখ কষ্টের সনদ
আর সুখগুলো জীবনশক্তির ফসল ফলালো আবাদ।
জাতির ভীত বিকশিত ও উজ্জীবিত হতে লাগলো বহমান নদ।
সেই চৈতন্যের গভীরেই আমি আজন্ম ক্ষত বিক্ষত অন্তরে,
স্বদেশ ভাষার কান্না ও যন্ত্রণার
বাক্য ধ্বনিতে গান করতাম অধিকারে।
জীবন ব্যথায় আমার হৃৎপিণ্ডের গভীরে
বিপ্লবী ঝড় তুললো আর রক্ত ঝরালো বার্তা মুক্তির!
দেহের জমিনে অরণ্য সাগর নদী,
পশু পাখি ও সূর্য কেঁদে উঠলো আকাশের নীল চাঁদ!
রক্তাক্ত পলাশের করুন তৃষ্ণা আমাকে ডাকলো ভাষার সংগ্ৰামে,
আমার বিপ্লবী স্বপ্নগুলো আবার ঘুরে দাঁড়ালো দেশপ্রেমে।
শ্রেণিহীন ভেদাভেদ মুক্ত সাম্যের আন্দোলন ও অনাগত যুদ্ধের বার্তা ক্রমে।
মনে হলো রফিক চন্দ্র সূর্য ও নক্ষত্রের
কাছে কথা দিয়েছিল আসন্ন মুক্তির!
শফিক সকাল দুপুর ও রাত্রির কাছে কথা দিয়েছিল নতুন আলোর!
বরকত সদ্য শিশু ও অভিজ্ঞ বৃদ্ধদের কাছে কথা দিয়েছিল সাম্যের,
জব্বার মানুষের বিবেক বোধ ও জাতির
কাছে কথা দিয়েছিল জীবন ক্ষুধামুক্তির।
সালাম মৃত্তিকা কৃজ্ঞচূড়া রজনীগন্ধা টগর
শেফালী বকুলসহ অসংখ্য ফুলের
কাছে কথা দিয়েছিল আগামী সংস্কার।
আর আমরা সবাই বিদগ্ধ মাতৃভাষার
কাছে কথা দিয়েছিলাম মায়ের অধিকার।
আমাদের ভাষা হবে বাংলা,আমাদের ভাষা হবে বাংলা।
আমারা বাংলা ভাষা চাই,আমারা মায়ের ভাষা চাই বাংলা।
যারা মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চায় তাদের
বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্ৰাম যুদ্ধের আওয়াজ ঝংকার‌।
আমারা বীর আমারা মহাবীর সৈনিক ন্যায়পরায়ণ আগামীর।
আমারা জীবন ও মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
নতুন শেকড়ে দেশপ্রেমের আলো দেই প্রভাত কিরণ উদয়।
যারা হয়েছে ইতিহাস জানি তাঁরা আর ফিরে আসবে না,
তাঁরাতো অমর,ইতিহাসে জ্ঞানের বৃত্ত জ্ঞানের নব নব চেতনা-
যেন একই কেন্দ্রবিন্দুতে ঘুরে ফিরে স্থির হয় প্রজ্ঞায় নিপুণ।
সময়ের বহমান নদী একুল ভাঙে ওকুল গড়ে!
পৃথিবীর আঁকা বাঁকা রাস্তা ঘুরে ঘুরে
মিলন ঠিকানা খোঁজে শান্তির নীড়ে।
ভাষা শহীদদের মৃত্যুঞ্জয়ী চোখ আগামীর
দিকে ফিরে তাকায় সৌরভে গৌরবে প্রজ্ঞা
বিভোর!
সাথে আমাদের স্বপ্নগুলো জাগে নিবিড়
নিশীথ রাতে জ্বল জ্বল নক্ষত্র আঁধারে।
কষ্টের দহন জ্বালায় হৃদয় পটে অনাটন
অভাব,তবুও সংগ্ৰাম যুদ্ধ আন্দোলন।
নিষ্ঠুর ভয়ানক কঠিন দানব শাসক,
নিরপরাধ জনতার বুকে বারুদের বিষ ঢালে নির্মম তাদের বিবেক।
জাতির গতিশীল জীবন কেঁদে ওঠে রক্তে
মৃত্যু আর মৃত্যু আগুনে জ্বলে পোড়ে মানব তবু চায় মুক্তি।
এমন দুঃখ ও কষ্টের লেলিহান শিখায়
আমাদের সামনের স্বপ্নগুলো অক্ষয়
স্বাধীনতার চেতনায় জেগে ওঠে দীপ্ত উদয়।
৮ই ফাল্গুন শহীদ মিনার স্মৃতিসৌধে নির্ণয়
কালো ব্যাজ জাতির পতাকা ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস বিজয়!
এক সময় দেহের ভাঁজে ভাঁজে আঁধার
ভেঙে স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতার আলো দৃঢ় সংস্কার।
রৌদ্রের দুচোখে থেকে জীবনের আন্দোলন বিকশিত হয়,
তরুণ উল্লাসে দীপ্তিময় যৌবন স্বাধীনতার গান শুনায়।
অনাগত আগামীকে ডেকে ডেকে বলে জেগে ওঠো,
তোমারা আবার জেগে ওঠো,
তোমারা আবার জেগে ওঠো,
শত্রুদের বিরুদ্ধে সংকেত দাও স্বাধীনতার।
আমরা রফিক আমরা শফিক আমরা সালাম আমারা বরকত আমরা জব্বার।
তোমাদের সাথে আছি,তোমাদের
সাথে আছি,ফেব্রুয়ারি থেকে মুক্তির
স্বপ্ন বাস্তবায়ন নতুন সংগ্রাম স্বাধীনতার