মেনু

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার নয় মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত : খুটির জোর কোথায়

// স্টাফ রিপোর্টার :: রাঙামাটির বরকল উপজেলার ৭নং শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা: নাসরিন আক্তার দীর্ঘ ০৯ (নয়) মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের প্রশ্ন প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তারের খুটির জোর কোথায়? এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, দুনীতি দমন কমিশন রাঙামাটি, রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগিরা।

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বরকল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বরাবর লিখিতভাবে গত ০৩ সেপ্টেম্বর-২০২৩ তারিখ শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ (০৯) নয় মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ও আর্থিক হিসাব না দেয়ার অভিযোগ করেন।

প্রতিমাসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে এম.আর-এ অনুপস্থিত দেয়া হলেও তিনি জালিয়াতি করে অফিসে এম.আর. জমা দেন। যা প্রমাণস্বরূপ শিক্ষক হাজিরার ফটোকপি সংযুক্তি দেয়া হয়। তাছাড়া, বিদ্যালয়ের এসএলআইপি, ক্ষুদ্রমেরামত ও বিভিন্ন জাতীয় উৎসবের আর্থিক হিসাব-নিকাশ না দিয়ে এসব অর্থ একাই আত্মসাৎ করে নিজ ব্যক্তিগত স্বার্থে ভোগ করার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখিত আর্থিক কার্যক্রমে আজও এলাকায় অনেক লোক দীর্ঘদিন পাওনাদার রয়েছেন। এধরনের পরিস্থিতিতে মোসা: নাসরিন আক্তার প্রধান শিক্ষক নিজে সুবিধা ভোগ করার লক্ষে শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত সকল সহকর্মী ও এলাকার সকলের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বানোয়াট দোষারোপ করে যাচ্ছেন।

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির অভিযোগ ৪জন শিক্ষক এর মধ্যে ৩জন নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও প্রধান শিক্ষক মোসা: নাসরিন আক্তার দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ও আর্থিক হিসাব না দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি যথাযথ যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন।

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষে আবেদনকারীরা হচ্ছেন :

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি কল্লোল চাকমা, সহসভাপতি জ্যোতির্ময় চাকমা, সদস্য মনিষা চাকমা, সুকেশ চাকমা, করুন কান্তি চাকমা, প্রণয় চাকমা, ঘোষিতা চাকমা, রূপাধন চাকমা ও অভিভাবক তন্ট চাকমা প্রমূখ।

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার নয় মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতের বিষয়ে বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হিতৈষী চাকমা বলেন, আমি (হিতৈষী চাকমা) বরকল উপজেলায় যোগদান করেছি ২ মাস আগে। এর মধ্যে শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তারকে আমি স্বশরীরে দেখিনি। গত ০৩ সেপ্টেম্বর-২০২৩ খ্রি. তারিখ রবিবার শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষে থেকে বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে আমাকে জানালে আমি বিষয়টি আমলে নিয়ে আমি নিজে শুকনাছড়ি গ্রামে গিয়ে কম-বেশী সবার সাথে কথা বলেছি, এবং শিক্ষকদের হাজিরাখাতা যাচাই করে শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার গত ০৮ ডিসেম্বর-২০২২ তারিখ থেকে প্রায় নয় মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এর প্রেক্ষিতে ০৫ সেপ্টেম্বর-২০২৩ খ্রি. তারিখ মঙ্গলবার শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তারকে ৩ কার্যদিবসে মধ্যে উত্তর দিতে কারণ দর্শানোর নোর্টিশ পাঠিয়েছি।

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার তার লিখিতভাবে দর্শানোর নোর্টিশের উত্তর পেলে আমি আমার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে প্রতিবেদন জমা দেব, বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিতৈষী চাকমা জানান।

এবিষয়ে শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা: নাসরিন আক্তার বলেন, আমি ০৩ জুন-২০২৩ তারিখ থেকে স্কুলে অনুপস্থিত। আর্থিক হিসাবের বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাঙামাটিতে আসলে টাকা দেয়া হয়, গত কিছুদিন আগে ৪০ (চল্লিশ) হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে, যে টাকা যেখানে খরচ করার কথা সেইখানেই খরচ করা হয়েছে।

তিনি বলেন শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আগের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ভাল ছিলেন। বর্তমান কমিটির সভাপতি কল্লোল চাকমা কিছুটা ভিন্ন।

প্রধান শিক্ষক মোসা: নাসরিন আক্তার রাঙামাটিতে শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে বলে জানান।

মোসা: নাসরিন আক্তার শুকনাছড়ি গ্রামে থাকাটা তার জন্য নিরাপদ নয় বলে জানান।

স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক মোসা: নাসরিন আক্তার গ্রামে থাকার জন্য শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে আলাদা ঘর দেয়া হয়েছে। এর আগের অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালিন গ্রামের লোকজনের সাথে মিলে মিশে ছিলেন।

শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ না করিয়ে এবং মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার পরও প্রতিমাসে ৩৪ হাজার (চৌত্রিশ হাজার) টাকা প্রতিমাসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করার কথা এবং বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতের বিষয়ে ০৫ সেপ্টেম্বর-২০২৩ খ্রি. তারিখ মঙ্গলবার বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররে কার্যলয় থেকে ৩ কার্যদিবসে মধ্যে কারণ দর্শানোর নোর্টিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার।

এবিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বরকল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিতৈষী চাকমা শুকনাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার যে নয় মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত তার কারণ দর্শানোর নোর্টিশে জবাব এবং বরকল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের লিখিত প্রতিবেদন পেলে বিনা-ছুটিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিতের কারণে প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।