মেনু

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মুজিবনগর


। আমিরুল ইসলাম রাঙা ।

মুজিবনগর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান। ১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেন। ১০ ই এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ১৭ ই এপ্রিল উপ-রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীবর্গ শপথ গ্রহণ করেন। সেদিন শতাধিক দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহন করেন। শপথ গ্রহণের পর বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর নামকরন করা হয় এবং মুজিবনগরকে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ঘোষনা করা হয়। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান প্রতিকী স্থান। মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত ইতিহাস। অথচ স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী সময়ে মুজিবনগর অনাদর ও অবহেলায় পতিত হয়। কালের পরিক্রমায় তা কখনো উজ্জল আবার কখনো ম্রিয়মান হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির অর্ধশত বছর অতিক্রম হলেও মুজিবনগর তার সঠিক ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বহন করে না। সেখানে যা করার কথা – যা হওয়ার কথা তা এখনো করা হয় না।

আমার বাড়ী থেকে মুজিবনগর যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। এই দীর্ঘজীবনে সেখানে দুইবার যাবার সুযোগ পেয়েছি। প্রথম গিয়েছিলাম স্বাধীনতার ১৬ বছর পর ১৯৮৭ সালে ১৭ ই এপ্রিল। মুজিবনগরে নির্মিত শপথ স্থানটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। উদ্বোধন করেন রাস্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ। উদ্বোধনী দিনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত হয়েছিলেন। পাবনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাথে সেই অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ার সুযোগ হয়। আমার জীবনে সেটাই প্রথমবার মুজিবনগর দর্শন। সেই সফরে গিয়ে আমার খুব ভালো লেগেছিল। বৈদ্যনাথতলার প্রাচীন আম্রকানন ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম। আশেপাশের পাড়াগুলোতে গিয়ে স্থানীয় জনগনের সাথে কথাবার্তা বলেছিলাম। সেখানে বিজিবি ক্যাম্পের জোয়ানদের সহযোগিতায় সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গিয়েছিলাম। সেদিন সীমান্তের পিলার অতিক্রম করে ভারতের মাটিতে পা রেখে পুলকিত হয়েছিলাম। সীমান্তের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার হৃদয়পুর অবস্থিত। এপাড় থেকে ওপাড়ের গাড়ী চলাচল দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের নেতৃবৃন্দ যে সড়ক দিয়ে মুজিবনগর প্রবেশ করেছিলেন সে সড়কটি দর্শন করি। সেটা ছিল এক দারুণ অনুভূতি।

মুজিবনগর শপথ স্থানটি উদ্বোধনের জন্য রাষ্ট্রপতি এরশাদকে বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণ করেন। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য সহ উচ্চ পর্যায়ের সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন। জেনারেল এরশাদ যথারীতি মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক শপথ বেদীটি উদ্বোধন করেন। সেদিন প্রথম মুজিবনগর দেখা এবং ঐতিহাসিক শপথ স্থানটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলেও হৃদয়ে অনেক ক্ষত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এমন স্থানে স্বাধীনতার ১৬ বছর পরে শপথ বেদী নির্মাণ করায় মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জন্ম নিয়েছিল।

এরপর ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার মুজিবনগর যাবার সুযোগ হয়। সেবার দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম। প্রথমবার মুজিবনগর যাওয়ার ২৯ বছর পর দ্বিতীয়বার যাওয়ার আগ্রহটা বেশি ছিল। মাঝের সময়কালে ব্যাপক উন্নতি আর পরিবর্তনের কথা শুনেছি। এবার স্বচক্ষে দেখার আগ্রহ নিয়ে দ্বিতীয়বার যাওয়া। যথারীতি ৫ ই মার্চ সকাল আটটায় পাবনা শহরের রাধানগরের বাসা থেকে বের হলাম। দেবোত্তর স্কুলে পৌঁছানোর পর আমাদের মুজিবনগর যাত্রা শুরু হয়। দু’টি বড় বাসে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির প্রায় শতাধিক সদস্যের বহর শুরু থেকে যেন আনন্দময় যাত্রায় রূপ নেয়। বেলা ১১টার দিকে আমরা মুজিবনগর পৌঁছায়। গাড়ী থেকে নেমে বনভোজনের স্থান নির্বাচন করা হয়। এরপর সেখানে সবাই ফ্রেস হয়ে নাস্তা করা হয়। তারপর সবাইকে মোটামুটি বিফ্রিং করে মুজিবনগর কমপ্লেক্স এলাকা ঘুরে বেড়ানো শুরু হয়। মুজিবনগর নেমে আমার অবাক হবার পালা শুরু হয়। প্রায় ২৯ বছর আগের দেখা সেই মুজিবনগর আমি চিনতে পারছি না। মনে হচ্ছে এটা যেন ঢাকার রূপনগর !! অপরূপ নির্মাণশৈলিতে অপরূপ এক নগর বানানো হয়েছে। মনটা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো। সাথে যাওয়া বেশীর ভাগ জনের চেনা জায়গা। সফর সঙ্গীদের অনেকেই অনেক বার এসেছেন। শুধু আমার কাছে মনে হচ্ছে সব যেন অচেনা। প্রথমবার এসে যে মুজিবনগরকে দেখেছিলাম এবার এসে তা মিলাতে পারছি না। স্কুলের ছাত্রদের মত আমার কাছেও মনে হচ্ছে সত্যিই এটা যেন আমার কাছে এক যথার্থ শিক্ষা সফর !

আমরা চারজনের টিম বানিয়ে ভ্যানগাড়ি ভাড়া করি। দুই ঘন্টা সময় ধরে আমাদের কমপ্লেক্স এরিয়া ও সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দেখাবে। এক সাথে আমরা কয়েকটি ভ্যানগাড়ি বহর করে বের হই। এক পর্যায়ে তীব্র রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পরি। ভ্যান চালক বলেন এটা নাকি বেড়ানোর জন্য অসময়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী হলো বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। অথচ এই অসময়ে প্রায় ৫০ /৬০ টি গাড়ী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে এসেছে। আগতরা বেশির ভাগ স্কুল মাদ্রাসার কমলমতি ছেলে-মেয়ে, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক এবং সাধারন দর্শনার্থী। কেউ ভ্যানগাড়িতে কেউ বা পায়ে হেঁটে বিশাল এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের ভ্যান চালক গাইড হিসেবে নানা বিষয়ে ধারণা দিচ্ছে। অপরূপ স্থাপত্য দেখছি আর চালকের বর্ণনা শুনছি। প্রায় দুইশত বিঘা জমি জুড়ে স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স দেখে মনটার মধ্যে নানা প্রশ্ন উদয় হতে থাকে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এত অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কি প্রয়োজন ছিলো ? এতে কি লাভ হয়েছে? এখানে একটি স্থান হলো স্মৃতিবিজরিত। যেখানে প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহন করেছিলেন। সেই শপথ স্থানটি তৈরী করতে যেখানে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেখানে মাত্র কয়েক বছরে শত কোটি টাকা খরচ করে এই অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা কেন করা হলো?

আমরা যারা ইতিহাসে জেনেছি মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার এই আমবাগানে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নিয়ে এই স্থানটিকে মুজিবনগর নাম দিয়ে প্রথম রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন। সেই মুজিবনগরে কোথায় নগর? কোথায় প্রথম রাজধানীর রাজভবন? স্বাধীনতার ১৬ বছর পর যেখানে শপথ স্থানটি পাকাকরন হয়। ২৭ বছর পর প্রথম রাজধানীকে উপজেলা বানানো হয় সেখানে শতকোটি টাকা খরচ করে মানচিত্র, হোটেল, মোটেল সহ এত অপ্রয়োজনীয় দালান-কোঠা কেন করা হলো? মনের অজান্তে প্রশ্ন উঠে এগুলো করতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে? কারা কারা লাভবান হয়েছেন? কাদের স্বার্থে এই সব অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো করা হয়েছে? নিজের কাছে এটা নিজের প্রশ্ন?

আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি হলো সরকারী কাজ কখনো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। কোন কালে বরাদ্ধকৃত টাকার কাজ ষোল আনা হয় না। কোথাও বরাদ্ধের অর্ধেক কোথাও সিকি পরিমাণ হয়। তাহলে এখানে কি তাই হয়েছে ? আমার সফর সঙ্গীদের কাছে এমন প্রশ্ন করায় কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারে নাই। আমি তাঁদের কাছে বলি এখানে যা হওয়ার কথা সেটা এখনো হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় এই দিবসটি এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়না। প্রতিবছর ১৭ ই এপ্রিল দায়সারার মত দিবসটি পালিত হয়। বিগত সময়ে কোন বছর পালিত হয়েছে আবার বহু বছর এই দিবসকে উপেক্ষা করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে কোন সরকার মুজিবনগর দিবসকে জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি দেয় নাই। এখানে কখনো সরকারী অথবা কখনো বেসরকারী অথবা কখনো দলীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়। কখনো আড়ম্বর কখনো অনাড়ম্বর করে মুজিবনগর দিবস পালিত হয়। যদি ১৭ ই এপ্রিল জাতীয় দিবস করা হতো তাহলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সকল মন্ত্রী এই মুজিবনগরে এসে দিবসটি পালন করতেন? বিদেশী অতিথিবৃন্দের সফর কর্মসূচীর মধ্যে সাভার স্মৃতিসৌধের সাথে মুজিবনগরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা আবশ্যক হতো। বছরে একদিন হলেও বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক হতে পারতো।

সফরসঙ্গীদের একটি কল্পিত গল্প বললাম। আমাদের দেশের এক ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়ে একটি ডাকবাংলো পরিদর্শনে গেছেন। যাবার আগে সেখানে কি কি আছে তার নথিপত্র দেখে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সেখানে একটি পুকুর থাকার কথা অথচ বাস্তবে সেখানে পুকুর নাই। উনি কৌতূহলী হয়ে আগের অফিসারকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন, কি ব্যাপার অমুক ডাকবাংলাতে একটা পুকুর থাকার কথা সেটা দেখছি না? বিষয়টি পূর্বের অফিসার বুঝতে পেরে বলেন পুকুরটি কাগজে কলমে কাটা হয়েছিল। আপনি বরং জরুরিভাবে ইষ্টিমেট করে পুকুরটি ভরাট দেখান। তাহলে একটা বড় অংকের টাকা আপনিও ইনকাম করতে পারবেন। উপরের গল্পটি কতটুকু সত্য জানিনা তবে এমন কর্ম এবং এমন কর্মকর্তা আমাদের দেশে অনেক আছে।

মুজিবনগর ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো সীমান্তের জিরো পয়েন্ট। ওপারে নদীয়া জেলার হৃদয়পুর। এক সময়ে ভারতীয় অঞ্চলে গাড়ী চলাচল করা দেখা যেতো। এখন কিছুই দেখা যায় না। নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক ভিতরে গেট করে বন্ধ করা হয়েছে। অথচ সেখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার অথবা ঢাকা শিশুপার্কের মত চড়কি দোলনা স্থাপন করলে সকল পর্যটক খুশি হতেন। সীমান্ত থেকে ফিরে আসার পথে দেখলাম এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মুজিবনগর কমপ্লেক্স সংলগ্ন পশ্চিম দিকের সড়কের ঢালুতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বস্তি বানিয়ে বসবাস করছেন। তাঁদের এখানে এমন করে বসবাস করা দেখে মুহুর্তে আমার স্বপ্নের মুজিবনগর ফ্যাকাসে হয়ে গেল। রাজধানী ঢাকার গুলশান বনানীর রাস্তার ফকির মিসকিনদের কথা মনে পড়লো। ছিঃ ছিঃ ছিঃ – বিবেককে ধিক্কার জানালাম । মুক্তিযুদ্ধের তীর্থস্থান দেখতে এসে একি দেখলাম ? যাদের আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা। যাদের অবদানে এই স্বাধীনতা। তাঁদের জীবন আজও অন্ধকারে! এখনো তাঁরা বস্তিতে বাস করছেন। এমন কথা লিখতে খুব কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছে। বিবেককে জিজ্ঞাসা করি ঐ যে স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মোটেল- হোটেল বানানো হয়েছে সেটা কাদের জন্য? কারা সেখানে রাত কাটায়? রাতে কি হয় সেখানে ? উফ- উত্তরটা কি কেউ দিবেন ?

আমার এই লেখা কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিতে যদি পড়ে তাহলে দয়া করে ঐ হতভাগা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলোকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করবেন ? আর কোন দয়াবান কোন বিবেকবান নীতি নির্ধারক যদি এই লেখা পড়েন বা তাঁর বিবেক জাগ্রত হয় তাহলে শত কোটি টাকার সাথে আর এক/দুই কোটি টাকা খরচ করে একটি মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয়স্থল বা বিশ্রামাগার যেন বানিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান থাকবে। এছাড়া দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে কোন মুক্তিযোদ্ধা মুজিবনগর বেড়াতে এসে এক/দুই রাত বিনাখরচে থাকার ব্যবস্থা থাকবে। অথবা নির্মিত হোটেল মোটেল গুলোতে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধারা মুজিবনগর বেড়াতে এসে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা দরকার।

আরেকটি প্রস্তাবনা হলো মুজিবনগর কমপ্লেক্স পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট করা দরকার। সেখানে দরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত গাইড। সেখানে পরিছন্নকর্মী বৃদ্ধি করা দরকার। শপথ বেদীর পরিবেশ সুরক্ষা করা দরকার। মানচিত্র স্থলের পাশে নিম্নমানের খাবার দোকানগুলো অপসারণ করা দরকার। সেখানে পরিকল্পিতভাবে খাবার দোকানগুলোর মাননিয়ন্ত্রন করতে হবে। সেখানে থিয়েটার হল স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র এবং ৭১ এর সচিত্র ছবিগুলি প্রদর্শন করা দরকার। পিকনিক ষ্পটকে আরো আধুনিকায়ন করা, পর্যাপ্ত টয়লেট ও বাথরুম প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সেখানে আধুনিক এবং উন্নতমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ভাবা দরকার দর্শনার্থীদের আরো কত আনন্দ বা বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায়। এই বিশাল কমপ্লেক্স এলাকায় চারিদিকে ঘুরে দেখার জন্য ট্রয় ট্রেন কিংবা ঝুলন্ত ক্যাবল কার স্থাপন করা যায় কিনা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের ভাবা দরকার ভারতীয় দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করে মুজিবনগর কমপ্লেক্স পরিদর্শন করার সুযোগ দেওয়া যায় কিনা। তাঁদের সেখানে একদিনের ট্রানজিট ভিসা প্রদান করে মুজিবনগর ভ্রমনের সুযোগ দিলে প্রচুর ভারতীয় পর্যটক আসতেন এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো।

আরেকটি বিষয়ে সর্বাগ্রে দৃষ্টি দেওয়া দরকার তাহলো সেখানে মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করা অতি প্রয়োজন। পিকনিক ষ্পটে কয়েকশত গজের মধ্যে ২০ /৩০ টি মাইকে ত্রিশ রকম গান বাজলে তা কখনোই শ্রুতিমধুর হতে পারেনা বরং সেটা চরম বিরক্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ সেখানে বহিরাগতদের মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা। কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের গান এবং দেশাত্ববোধক গান বাজানোর ব্যবস্থা করতে পারেন । পরিশেষে একজন নাগরিক হিসেবে আমার সুপারিশ অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে মুজিবনগরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা হোক । অবিলম্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজ্জল এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানীর মর্যাদা দিয়ে প্রতি বছর ১৭ ই এপ্রিল রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করার অনুরোধ করছি।

লেখক – আমিরুল ইসলাম রাঙা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবীদ।